মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

সুন্দরগঞ্জের তিস্তার বুকে পানি নাইঃ ধূ ধূ বালুচর

সুন্দরগঞ্জের তিস্তার বুকে পানি নাইঃ ধূ ধূ বালুচর

স্টাফ রিপোর্টারঃ তিস্তা নদীর কতা (কথা) কী আর কমো বাহে! কয়মাস আগেও তিস্তা হামার বাড়িঘর ভাঙ্গিল। বর্ষাকালে তিস্তার ঢেউয়ের পানিত হামার কইলজ্যাত পানি থাকে নাই। আর এলা সেই তিস্তার নিজের বুকোতে পানি নাই। চাইরোপাকে (চারপাশে) খালি ধসধসা বালা আর বালা (বালু)। তোমরায় দেখো উজান-ভাটি শুধু চর আর চর। মাঝে মাঝে একনা (একটু) করি পানি আছে। সেটেই ফির মাছের কোনো বংশ নাই। দেখি মনে হয় তিস্তা এলা মরা নদী।
তিস্তা নদী নিয়ে আক্ষেপ করে এভাবেই আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন।
খরস্রোতা তিস্তা বর্ষায় ফুলেফেঁপে দুকূল ভাসিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। হিংস্র থাবায় ভেঙে নিয়ে যায় ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও স্থাপনা। সেই তিস্তা চৈত্রের শুরুতেই শুকিয়ে মরুভূমি হয়েছে। ফলে প্রমত্তা তিস্তা পানির অভাবে জীর্ণদশায় ভুগছে।
তিস্তা নদীতে বর্ষা মৌসুমে পানির দেখা মিললেও শুকনা মৌসুমে থাকে হাঁটুপানি আর কেবল ধূ-ধূ বালুচর। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে ব্যর্থ হওয়ায় ধীরে ধীরে তিস্তা নদী পানিশূন্য হয়ে কঙ্কালসারে পরিণত হয়েছে। তিস্তা এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীটি ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নও ঝুলে আছে বছরের পর বছর।
তিস্তার নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অস্তিত্ব রক্ষার পানিটুকুও না থাকায় তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। খেয়া পাড়ে বা মাছ ধরতে বর্ষায় হাজারো নৌকা নিয়ে অবারিত ছুটে চলা মাঝি-মাল্লাদের দৌড়ঝাঁপ থেমে গেছে। পানি আর মাছভর্তি তিস্তার বুকে চিকচিক করছে বালুকণা।
পানিশূন্য হওয়ায় তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার বুক চিরে জমি জেগে উঠলেও সেচের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। কেউ কেউ দূর থেকে পানি এনে প্রাণ টিকিয়ে রেখেছেন চাষাবাদ করা ফসলের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশির দশকের দিকে প্রমত্তা তিস্তা নদী দিয়ে কাউনিয়া, হারাগাছ, কামারজানি, সুন্দরগঞ্জ, চিলমারী, জামালপুর, ইসলামপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নৌযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য জমজমাট থাকতো। ওইসময় নৌপথ ছিল সরগরম। এখন তিস্তা পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। নাব্য কমে যাওয়ায় নৌপথে ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়েছে। বেকার জীবন কাটাচ্ছেন নৌ শ্রমিকরা। পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় এ নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
নৌকার মাঝি আবেদ আলী বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় নদী পারাপারে এখন আর নৌকা লাগে না। লোকজন হেঁটে পার হয়।
তিস্তাপাড়ের জেলে বলরাম চন্দ্র বলেন,পানি না থাকায় মাছ নেই তিস্তায়। সারাদিন নদীতে থেকে তিনবেলা খাবার জোটে না। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করছি।
তিস্তাপাড়ের কৃষক আউয়াল মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগেই তিস্তায় সেচ মেশিন লাগিয়ে চাষাবাদ করতাম। এতে মেশিনে পানি উঠতো বেশি। তেল খরচ হতো কম। এখন নদীতে পানি নেই। সেচ বোরিং স্থাপন করে চাষাবাদ করায় তেল খরচ বেশি হচ্ছে।
আরেক কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে। মাইলের পর মাইল বালুচর। এ বালুচর দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি, অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।
হরিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল মোস্তফা। তিনি বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষজন গেলো কয়েক বছর ধরে শুধু শুনেই আসছেন সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করছে। আজও এ প্রকল্পের বাস্তব কোনো রূপ দেখতে পেলাম না।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com