বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ৬ বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত

সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ৬ বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত

সাদুল্লাপুর প্রতিনিধিঃ সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাদিয়া খাঁন সনি (১২৮৩১২) প্রায় ৬ বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি কোথায় আছেন, তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেউ বলতে পারছেন না।
শুধু তিনি একা নন আরো দুজন কর্মকর্তা কর্মস্থলে অনুপস্থিত তারা হলেন পরিসংখ্যানবীদ তৌফিকুজ্জামান ও স্বাস্থ্য সহকারি শামীম তবুও তাদের সরকারি চাকরিটি বহাল তবিয়তে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অফিস সূত্রে জানা যায়, ডাঃ সাদিয়া খাঁন সনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগের পরিঃ (স্বা:)/ঢাকা/ ৪৫/১৫০ তাং০৩/১১/২০১৩ স্মারকে (কোড নং ১২৮৩১২) মেডিকেল অফিসার হিসেবে বদলী হয়ে ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। কিন্তু ডাঃ সাদিয়া খাঁন সনি গত ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর হতে বিনাঅনুমতিতে অনুপস্থিত আছেন। তার অনুপস্থিতির বিষয়টি কিছু দিন পর একই বছরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আখতার আলম সিভিল সার্জনকে অবহিত করেন।
এ ব্যাপাবে গাইবান্ধা সিভিল সার্জন খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ডাঃ সাদিয়া খাঁন সনি অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে মহাখালী শৃঙ্খলা শাখা থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
পরিসংখ্যানবীদ প্রেষণে এমআইএস ঢাকা। তার সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি, ৩৮ জন স্বাস্থ্য সহকারীর মধ্যে শামীম মিয়া ১/১০/২০১১ সাল হতে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য সহকারী ৫০ টি পদের মধ্যে ১২ টি পদই শুন্য।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এই ডাক্তারের অনুপস্থিতির কারণে বা পদ গুলো ধরে থাকায় ও ডাক্তার এবং জনবল কম হওয়ার ফলে এই উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১১ টি ইউনিয়নের জনসাধারণ সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানামুখী সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের জন্য সরকারী একমাত্র এই হাসপাতালে জনসাধারন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। এখানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ডাক্তার সংকট ও পরীক্ষা নীরিক্ষার যন্ত্রপাতি। সবমিলে সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে বারবার আবেদন করা হলেও সংকট সমাধানে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ উদ্যোগ নেননি।
জানা যায়, ৩১ শয্যার এ হাসপাতালটিকে ইতিপূর্বে ৫০ শয্যা ঘোষনা করা হয়েছে। ৫০ শয্যার ভিত্তিতে রোগী ভর্তি এবং ওষুধ পথ্য দেয়া হলেও জনবল কাঠামো রয়েছে ৩১ শয্যার। সেখানেও শুন্যতা আর শুন্যতা। ১১ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এ বিভাগে চিকিৎিসক/ সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে ২১ টি অর্থাৎ জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ১ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি)১ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ১ জন,জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ১ জন,আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১ জন,মেডিকেল অফিসার ২ জন, মেডিকেল অফিসার ( উপঃস্বাঃ কেন্দ্র) ৬ জন,সহকারী সার্জন (উপঃস্বাঃকেন্দ্র) নবসৃষ্ট পদ ৫ জন,ডেন্টাল সার্জন ১ জন,আয়ুববেদী মেডিকেল অফিসার ১ জন, যার মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন।
প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ১ জন ডাক্তার দিয়ে গাইনী বিভাগের সিজারিয়ান অপারেশন চালু রাখার কথা থাকলেও বন্ধ আছে। ফলে গর্ভবতী মা’ দের বিভিন্ন ক্লিনিকে দৌড়াতে গিয়ে হয়রানী পেরেশানী সহ সীমাহীন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। অথচ জুনিয়র গাইনী কনসালটেন্ট পদে একজন সিনিয়র চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও অ্যানেসথেসিষ্ট এর অভাবে এ বিভাগের সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ফলে দিনের পর দিন অব্যবহৃত থাকায় ওটি’র মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আর্য়ুবেদী মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী),মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই),এমটি (ইপিআই) নাসিং সুপারভাইজার,এ পদগুলো থাকলেও আজ পযর্ন্ত দেওয়া হয়নি।
এসএসিএমও বদলী জনিত কারনে, আয়া বদলী জনিত কারনে ,মালী পিআরএল জনিত কারনে, কুক মৃত জনিত কারনে ,মশালচি,নিরাপাত্তা প্রহরী পদ গুলো শুন্য ,বর্তমানে আউট সোসিং মাধ্যমে পদায়নকৃত।
অর্থাৎ অনুমোদিত পদ সংখ্যা ২০৫ জন,কর্মরত পদ ১৬০ জনের মধ্যে বদলী জনিত কারনে ৪৫ জন পদ শুন্য।
এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সরে মেশিনটি অনেক দিন অর্থাৎ ১৭ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে, অপারেটরও নেই। এক্সরে মেশিনটি অকেজো পড়ে থাকায় হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে রোগীদের বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র থেকে এক্স-রে করাতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, এক্সরে মেশিন রাখা কক্ষটি তালাবদ্ধ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন ধরে এক্সরে মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অপারেটর (রেডিওগ্রাফার) নেই দীর্ঘদিন ধরে। অপারেটর থাকলে হয়তো ঠিক হতো। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৬৭ সালে ৩১ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মিত হওয়ার পর ২০১০ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে উন্নীত করা হয়। ২০১০ সালে এই ক্যাম্পাসে নতুন ভবন নির্মিত হয়। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের লোকজনও এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এক্সরে মেশিন না থাকায় হাসপাতালে আসা রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
অনেক সময় এক্সরে মেশিন না থাকায় বিলম্ব হচ্ছে চিকিৎসা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ সূত্র জানায়, এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ রোগী জরুরী বিভাগে সেবা নেন। ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। অনেক সময়য় অন্তর্বিভাগে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩৫ জনের মতো রোগীর এক্সরে প্রয়োজন হয়।
প্যাথলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি এক্সরে যন্ত্রে ফি নেয়া হতো ৭০ টাকা । অথচ গাইবান্ধায় এই এক্সরে করাতে গিয়ে রোগীদের গুণতে হচ্ছে সাধারণ এক্সরের জন্যে ২৫০ টাকা আর ডিজিটাল এক্সরের জন্যে ৩০০ টাকা।রংপুরে আরো বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এক্সরে মেশিন নষ্ট আছে শুনেছি আমি সবেমাত্র এসেছি। রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনবল ও এক্সরে মেশিন ঠিক করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে সমাধানে ও স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে গাইবান্ধা -৩ আসনে মাননীয় সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাঃ মোঃ ইউনুস আলী সরকার এমপির সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com