বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:১১ অপরাহ্ন

সাঘাটা -ফুলছড়ির উপ-নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে

সাঘাটা -ফুলছড়ির উপ-নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টারঃ নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে গাইবান্ধা-৫ আসনে। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশন আসনটি এরই মধ্যে শূন্য ঘোষণা করেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ফজলে রাব্বী মিয়ার ছোট মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজ।
সেই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী নাহিদুজ্জামান নিশাদ। এছাড়া দলীয় সম্মতি পেলে প্রার্থী হতে পারেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ফারুক আলম সরকার ও সাঘাটা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু।
সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। দুই উপজেলা মিলে এ আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৫৫। এ আসনে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন বাড়লেও দুই উপজেলার নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। তবে প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের ইমেজ ব্যবহারের পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন ফজলে রাব্বী মিয়ার ছোট মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী। তিনি ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্বামী সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকার। বর্তমানে বুবলীর সমর্থনে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে রয়েছে তার পোস্টার ও ব্যানার। এরই মধ্যে তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগও করেছেন।
ফারজানা রাব্বী বুবলী বলেন, আমার বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল আমি যেন এ আসন থেকে নির্বাচন করি। বাবা দীর্ঘদিন এই এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার নানা উন্নয়ন করেছেন। আমি তার ইচ্ছা অনুযায়ী উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ও নির্বাচিত হলে বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে এলাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো। তিনি আরও বলেন, এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে অতীতে ছিলাম, বর্তমানে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।
আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে দলের জন্য কাজ করে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগকে বেশ সুসংগঠিত করেছেন। ফলে তার নেতৃত্বে আস্থাশীল হয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নবউদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। তিনি তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন।
মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন। আর নির্বাচিত হলে প্রথমেই উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বাড়াতে বালাসী-বাহাদুরাবাদ টানেল নির্মাণে উদ্যোগী হবেন। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে সাঘাটা-ফুলছড়ি রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করবেন। চরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে গাইবান্ধা শহর থেকে সোনাতলা হয়ে মোকামতলা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ এবং বোনারপাড়া রেলজংশন আধুনিকায়নসহ দুই উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করবেন তিনি।
উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে এরই মধ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজ। তিনি বিগত দিনে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের দুইবারের সাধারণ সম্পাদক এবং দ্বিতীয় বারের মতো উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
জি এম সেলিম পারভেজ জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে সাঘাটা-ফুলছড়ি রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের তার চেষ্টা থাকবে। তিনি বালাসী থেকে বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত টানেল নির্মাণে সরকারকে উৎসাহী করা, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দ্রুত ও সহজ যোগাযোগে বিকল্প সড়ক নির্মাণ এবং কৃষির আধুনিকায়নে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
দলীয় প্রার্থীদের ভিড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা খুব একটা চোখে না পড়লেও এবারের উপ-নির্বাচনে নতুন মুখ হিসেবে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী নাহিদুজ্জামান নিশাদ। এরই মধ্যে নিজের জন্মস্থান সাঘাটার জুমারবাড়ি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় সভা, সমাবেশ, লিফলেট, পোস্টারের মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে শক্তভাবেই লড়বেন বলে আভাস দিচ্ছেন তিনি।
সরকারদলীয় প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের ব্যক্তিগত প্রস্তুতি থাকলেও তারা দলের নির্দেশে প্রার্থী হওয়া বা না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। বিগত সময়ের বিএনপির প্রার্থী ফারুক আলম সরকার জানান, নির্বাচনে লড়াই করার জন্য শক্তি ও সামর্থ্য আছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি প্রার্থী হবেন না।
এদিকে অ্যাডভোকেট এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, জাতীয় পার্টি উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমি পরপর দুইবার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সফলতার সঙ্গে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। সুযোগ পেলে এলাকার আরও উন্নয়ন করবো। তবে বর্তমান সরকারের আমলে ভোট নিয়ে সংশয় আছে। তা ছাড়া ইভিএমে ভোট হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে কী না সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২২ জুলাই নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান। এরপর গত ২৪ জুলাই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সংসদ সচিবালয়। তবে এই আসনের উপ-নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com