শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ভোক্তাদের নাভিশ্বাস

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ভোক্তাদের নাভিশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। কাজ হারিয়ে নিয়মিত আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন বিপাকে পড়েছেন আবার ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিনিয়ত লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদা মেটাতেও ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের চিত্র। এর প্রভাব পড়েছে মধ্যবিত্ত, বেকার, চাকরিচ্যুত ও খেটে খাওয়া মানুজনের জীবনযাত্রায়। বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫৮০ টাকা, ছাগলের (খাসি) মাংস ৭৫০, মুরগি ১৫০-২৫০ টাকা, মোটা চাল ৪০ টাকা, চিকন চাল ৫০-৮০ টাকা, ইলিশ মাছ ৬০০-৯০০ টাকা, সিংমাছ ৪০০ টাকা, অন্যান্য মাছ ৩০০ টাকা (গড়ে), সোয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা, সরিষা তেল ১৯০ টাকা, বিভিন্ন ডাল ১০০-১৪০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, শাক-সবজি (প্রকারভেদে) ২৫-৮০ টাকা, প্রতি পিস ডিম ৯-১৪ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য মসলাসহ নিত্যপন্যের দামও বেড়েছে আকাশচুম্বি। এসব দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি পরিস্থিতিতে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মানুষজন বাড়ি থেকে পরিকল্পা করে বাজারে গেলেও সে হিসেব পণ্য ক্রয় করতে পারছেন না। এদিকে, বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের দফায় দফায় লকডাউন আর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কারনে কর্মহীন হয়ে পড়ে শ্রমজীবী মানুষেরা। এর প্রভাবে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যে হু হু করে বেড়ে চলেছে ভোগ্য ও নিত্যপণের জিনিসিপত্রের দাম। এমন দামের কারণে একেবারই বেসামাল সাধারণ মানুষেরা। দিনদিন তাদের ব্যয় বাড়লেও, বাড়ছে না আয়-রোজগার। ফলে সংসার চলাতে হাঁসফাঁস উঠেছে তাদের। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ছিন্নমূল পরিবারের অনেকে বেঁছে নিয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি ও চুরি-চামারি কার্যকলাপ। সম্প্রতি সাদুল্লাপুরের আব্দুল মজিদ নামের এক ইজিবাইক চালককে খুন করে তার গাড়িটি নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এমনকি শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দিনেদুপুরে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। সেই সঙ্গে মানুষের এই অভাব অনটনকে পুঁজি করে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় দাদনেরা। বিভিন্ন পরিবারের লোকজন তাদের দায়ভার সারতে ওইসব সুদারুদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাদন ব্যবসায়ীরা চরা সুদ গ্রহণ করছে । এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে প্রচন্ড আঘাত হানতে শুরু করেছে। অধিক দামে পণ্যসামগ্রী কেনা ভুক্তভোগীদের বোবা কান্না যেন দেখার কেউ নেই। অস্থির এই বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকলে সাধারণ মানুষ আরও বেকায়দায় পড়তে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। মনোয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, যেভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় আয় বাড়েনি তার। এতে করে পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়ছে ঋণের বোঝা। তিনি আরও বলেন, আগে একাধিক খাবারের আইটেম থাকত। এখন খাদ্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ায় খাবারের সেই আইটেম কমানো হয়েছে। লতা ভ্যারাইটিজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী শ্রী নরেশ চন্দ্র সাহা বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল-ডাল-তেল-মসলাসহ সব ধরনের জিনিপত্রের দাম বেড়েছে। এতে করে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সাঘাটার কাচামাল ব্যবসায়ী মিন্টু মিয়া জানান, বেশি মূল্যে ক্রয় করে বিক্রি করতে হয়, এতে ক্রেতাদের সাথে প্রায় কথা কাটাকাটি হয়। গাইবান্ধার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি অব্যাহত রয়েছে। যারা কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গাইবান্ধা জেলা কৃষি বিপণন অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মোঃ অলিউর রহমান জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে সম্প্রতি চাতাল-মিল মালিকসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। এছাড়াও টিসিবির মাধ্যমে ভোক্তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com