মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতাল বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিতঃ দালালদের দৌরাত্ম্যঃ রোগীদের মাঝে নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন

গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতাল বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিতঃ দালালদের দৌরাত্ম্যঃ রোগীদের মাঝে নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন

স্টাফ রিপোর্টারঃ নানা সমস্যায় জর্জরিত গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল। কাটা-ছেঁড়া করতে হলে সুই সুতোর দাম দিতে হয়। রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। আছে অনিয়ম দুর্নীতি ও ওষুধ সংকট।রোগীদের খাবারের মান নেই বললেই চলে। কারণ ঠিকাদার নাকি সাবেক এমপির লোক। তাই কর্মকতারও ঠিকাদারকে কিছু বলার সাহস পান না। এ অবস্থায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে হাসপাতাল। নেই আইসিইই । আধুনিক যন্ত্রপাতি, ডাক্তার, নার্স সহ জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। ফলে দুরদুরন্ত থেকে রোগীরা হাসপাতালে তাদের চাহিদা মতো চিকিৎসা পাচ্ছেনা। হাসপাতালে সুচিকিৎসা, ওষুধ সরবরাহ ও খাদ্যের মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয়রা। কিন্তু কোন কাজ হয়নি ।
গাইবান্ধা নাগরিক কমিটির নেতা মিহির ঘোষ বলেন, অনেক আন্দোলন হয়েছে হাসপাতাল নিয়ে। হাসপাতালের খাবার নিয়ে কথা হয়েছে অনেক। কিন্তু কোন পরিবর্তন হয়নি। জরুরী বিভাগে কাটা বা ক্ষত স্থানে সেলাই দিতে গেলেও গুনতে হয় টাকা । টাকা না হলে বলা হয় ভালো সুতো নেই । সুতো বাহির থেকে কিনতে বাধ করা হয় রোগীদের। ব্যান্ডেজ করতে গেলেও দিতে হয় মোটা অকের টাকা। টাকা না দিলে বিলম্ব করা হয় সেলাই বা ব্যান্ডেজ করতে । এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। সে কারণে সামান্য কোন রোগ নিয়ে এলেও রোগীকে রেফার করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । হাসপাতালে নেই কোন আইসিইউ ইউনিট । ফলে হার্টের কোন রোগী এলে হয় মরতে হয় না হয় রংপুরে যাওয়ার পথে রাস্তায় জীবন নিভে যায় সেই রোগীর। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে দুটি ভেন্টিলেটর মেশিন থাকলেও সেগুলো বিশেষজ্ঞে ডাক্তারের অভাবে চালু করা হচ্ছে না। ফলে মূল্যবান মেশিন গুলো যেমন নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে রোগীরা সেবা পাচ্ছেনা।
জাসদ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জনি বলেন, যতোদিন না হাসপাতালে আত্মীয়দের প্রভাব থাকবে ততদিন সমস্যার সমাধান করা মুশকিল। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নানান অভিযোগ। বিজলী বাতি নেই বললেই চলে। গোটা হাসপাতালের রোগীদের ওয়ার্ড জুড়ে মাত্র ২ থেকে ৩ টি বাল্ব জ্বালানো হয়। ফলে অন্ধকারে ডুবে থাকে হাসপাতালের অধিকাংশ ওয়ার্ড । খাবার মান নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। একেবারে ভালো নয়। রোগীদের দেয়া হয় নিম্নমানের পাউরুটি, কলা, ডিম, দুধ, ভাত ও তরকারি। দুধের অবস্থা যেন সাদা পানি । আর ডিম কলা দেখলে মনে হবে কোথাও থেকে বিনা পয়সায় নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে অনেক রোগী তার আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে বাইর থেকে খাবার কিনে হাসপাতালে খাচ্ছেন। খাবারের ঠিকাদার নাকি সাবেক এমপির শাগরেদ । সে কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিরক্ত ।
হাসপাতাল জুড়ে অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন । চারপাশে ময়লার স্তূপ জমে থাকলেও তাদের চোখে পড়ে না । পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বেহাল দশা । করোনাকালীন হাত ধোয়ার জন্য হাসপাতাল চত্বরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়। সেটি এখন হয়েছে অপরিষ্কার পানির হাউস । রোগীদের স্বজনরা কোথাও পানি না পেয়ে ওই হাউসেই কাপড় কাচা থেকে শুরু করে খাবার পানি পর্যন্ত সংগ্রহ করেন ।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মাহবুবুর রহমান জানান, হাসপাতালটি ২ শ বেড ঘোষণা দিলেও ২ শ বেডের রোগীদের চিকিৎসার জন্য জনবল দেয়া হয়নি। ৪২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১৮ জন ডাক্তার দিয়ে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। মেডিসিন, ইএনটি, চক্ষু, কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌন রোগ, সার্জারিসহ বিভিন্ন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এখানে দুটি এক্সরে মেশিন থাকলেও একটি বিকল অপরটিতে রেডিও লজিস্টের অভাবে কাজ হয় না।
হাসপাতালে একটি আলট্রাসনোগ্রাম থাকলেও সনোলজিস্ট ডাক্তার না থাকায় সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন এ মেশিনটি চালু রাখা হয় কোনোরকমে। ফলে রোগে অসুস্থ ব্যক্তিরা বিশেষ করে মহিলা রোগীরা চরম বিপাকে পড়ছেন। ক্লিনারের পদ ১৫ জনের থাকলেও কর্মরত রয়েছে মাত্র ৪ জন। হাসপাতালের বিভিন্ন পদে ১শ ৮৭ জন কর্মচারী থাকার কথা । কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৬৫ জন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com