বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

দরিয়াপুরে মীরের বাগানে মানত পূরণের মেলা

দরিয়াপুরে মীরের বাগানে মানত পূরণের মেলা

স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনাকালীন দুই বছর বিরতির পর এবার বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুরে ইতিহাসখ্যাত মীরের বাগানের ঐতিহ্যবাহি ইচ্ছা বা মানত পূরণের মেলা। প্রতি বছর বৈশাখ মাসজুড়েই চলে এই মেলা। প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান মেলা প্রাঙ্গণে। গাইবান্ধার মীরের বাগানে তিন অলির মাজার প্রাঙ্গণ মানত বা ইচ্ছা পুরণের আশায় দুর-দুরান্ত থেকে আসা ভক্ত নারী-পুরুষের পদচারনায় সরগরম। মনের ইচ্ছা পূরণ করতে মাজারে শিরনি দেওয়ার প্রস্তুতির ব্যস্ততা তখন ভক্তদের। কেউ অস্থায়ী উনুনে আগুন জ্বালছেন, কেউবা মানতের খিচুড়ি রাধছেন আবার কেউ করছেন মাজার জিয়ারত। তাঁদের বিশ্বাস, এতে অসুখ-বিসুখ কিংবা যে কোন ধরণের বালামুসিবত দূর হবে, বিশেষত: সন্তানধারণে অক্ষম মহিলারা এখানে মানত করলে হবেন সন্তান সম্ভবা, সারা বছরের পঙ্কিলতা দূর হয়ে সামনের জীবন হবে সুখের, সংসারে-কর্মে আসবে সাফল্য। মীরের বাগানের ঐতিহাসিক পীর শাহ সুলতান গাজী, মীর মোশারফ হোসেন ও ইবনে শরফুদ্দিন শাহ এর মাজার আর মসজিদের সামনে এবং দু’পাশের ৩.৯৫ একরের খোলা প্রান্তর জুড়ে বসে এ মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট এলাকায় চারু, কারুপন্যসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। এরসাথে রয়েছে নানা মিষ্টি, মুড়ি, জিলাপির দোকান। আর মাজার সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী চুলা বানিয়ে চলে বিশেষ খিচুরী রান্না। মানত বা ইচ্ছা পুরণের আশায় দুর দুরান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত ভক্ত নারী-পুরুষ এখানে এসে মাজার জিয়ারত করে এবং খিচুরী রান্না করে। রান্না করা খিচুরি মাজার কর্তৃপক্ষ এবং দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করে নিজেরা খান এবং তবারুহ হিসেবে বাড়ীতেও নিয়ে যায়। এখানে খিচুরী রান্নার বিশেষ বৈশিষ্ট হলো- ভক্তরা বাড়ী থেকে চাল-ডাল, মুরগী, জ্বালানী কাঠসহ রান্নার অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে আসে মাজারে। মাজারের নির্দিষ্ট স্থানে মুরগী জবাই করে কেটে-কুটে মাজারের সামনে চুলায় রান্না করা হয় মুরগীর মাংসের খিচুরী। ভক্তরা জানান, দুরারোগ্য অসুখ, সন্তান কামনাসহ নানা সমস্যা সংকট নিরসনে মানত পূরণের লক্ষ্য নিয়ে তারা এখানে আসেন। মাজারের মোতওয়াল্লী সুত্রে জানা গেছে, দারিয়াপুরের মীরের বাগানের সাথে ইতিহাসখ্যাত মীর জুমলার সম্পর্ক আছে বলে কিংবদন্তী রয়েছে। অতীতে বিশাল এক আমবাগানের জন্য এই মীরের বাগানের পরিচিতি ছিল। ১৩০৭ সালে (তথ্যসূত্র: মসজিদ গাত্রের শিলালিপি) কলকাতার পীর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী বাহারবন্দ পরগণার ঘন জঙ্গল থেকে পীর ইবনে শরফুদ্দিনের স্মৃতিবাহী কবর ও মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উৎঘাটন করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেন। ময়মনসিংহের ক্বারী করিম বক্সের উত্তরাধিকারীগণ বংশ পরম্পরায় মোতওয়াল্লী হিসেবে এই ওয়াকফ সম্পত্তিটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। জনশ্রুতি আছে যে, সংস্কারকালে মসজিদের ভেতরে একটি কালোপাথর পাওয়া গিয়েছিল এতে ১০১১ই সাই উৎকীর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালের কোন এক সময় তা হারিয়ে যায়। বহু অনুসন্ধান করেও এই কালোপাথরটির আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। মীরের বাগানের পীর সাহেবের মাজার জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। স্থাপত্যকলার বিচারে মীরের বাগানের মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মমতের শিল্পরীতির বিন্যাস লক্ষ্যণীয়। সঠিক ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যালোচনার মাধ্যমে মীরের বাগান সামগ্রিকভাবে বাংলার ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বের তথ্যের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com