সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫০ অপরাহ্ন

গাইবান্ধায় পুরুষের পাশাপাশি কৃষিতে জমিতে কাজ করছে নারী শ্রমিকরা

গাইবান্ধায় পুরুষের পাশাপাশি কৃষিতে জমিতে কাজ করছে নারী শ্রমিকরা

স্টাফ রিপোর্টারঃ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করেন নারীরা। যাদের পরিশ্রমের নকশায় স্থান পায় পরিবার, সমাজ। ঘর-গৃহস্থালি থেকে কৃষি- সর্বত্র যাদের হাতের স্পর্শে মজবুত হয় অর্থনীতি। সেই নারীদের অধিকারের নকশাটা আজো অসম্পূর্ণ। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র কোথাও মূল্যায়িত হয় না নারীদের পরিশ্রমের ঘামের ফোটা। একজন নারী স্বামী-সন্তানকে বিছানায় রেখেই চোখ ঘষতে ঘষতে দিন শুরু করেন নানা রকম কাজের মধ্য দিয়ে। বলছি তেমনি এক নারীর কথা, উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের রসুলপুর চরের শাপলা বেগম। তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হলো তার কাজ,হাঁস-মুরগী-গবাদি পশুকে খাবার দেয়া, সবজির উঠোনে যত্ন থেকে ঘর-গৃহস্থালির এসব কাজকর্ম প্রতিদিনের নকশারই অংশ।
এরইমধ্যে লাল আভায় ফাগুনের আকাশ রাঙিয়ে সূর্যের উপস্থিতি। দিনের রুটিন ঠিক রাখতে সূর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যায় ব্যস্ততা। তালা, বাসন-কোশন মাজা-ঘষা শেষ করে চুলোয় ওঠে ভাতের হাড়ি। পরিবারের লোকজনের পাতে খাবার তুলে দেয়ার পরেও বিরাম নেই তার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে, গৃহস্থালি ও পরিচর্যার কাজে পুরুষদের তুলনায় আট গুণ বেশি সময় ব্যয় করেন নারীরা। শাপলা বেগম বলেন,সেই কাক ডাকা ভোর থেকে তার দুহাতে ঘর গৃহস্থালি সামলানোর কাজটা করলেও। তার ছোট্ট শিশু সাদিয়ার মতো শহরের শিক্ষিত মেয়েদেরও বদ্ধমূল ধারনা মায়েরা কোন কাজ করেনা। কিছুর পরেও মায়েদের ঘর গৃহস্থালির কাজ সম্পর্কে বিরূপ এক ধরণের ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠছে শিশুরা। সাদিয়ার কাছে তার মায়ের কাজের মূল্যায়ন জানলে তা স্পষ্ট বোঝা যায়।
ভোর সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ঘর গৃহস্থালির কাজ, রান্না-বান্না, সমস্ত কিছু শেষ করে সন্তানকে স্কুলের জন্য প্রস্তুতি আর স্বামীকে ফসলের ক্ষেতে যাওয়ার সমস্ত আয়োজন শেষ করে দুর্গম বালুচর পাড়ি দিয়ে এই নারীদের যাত্রা এখন ফসলের ক্ষেতের উদ্দেশ্যে।
পায়ের নীচে উত্তপ্ত বালি আর প্রখর রোদ উপেক্ষা করে তারা বাদাম তুলছেন। বাদামের মতো প্রায় ফসলের বীজ সংরক্ষণ থেকে রোপণ, পরিচর্যা মাড়াই পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে লেগে থাকে তাদের হাতের স্পর্শ। অথচ ফসল ঘরে ওঠার পর বাজারে বিক্রির পুরো প্রক্রিয়া যুক্ত থাকেন পরিবারের পুরুষ কর্তারা। ফলে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর মতোই ভাত আর কাজ নিয়ে থাকলেও নিজের ইচ্ছামতো এতোটুকু শখ আহ্লাদের প্রয়োজনেও হাত পাততে হয় পরিবারে পুরুষ কর্তাদের কাছে। পড়ের গল্পেও প্রধান চরিত্র এই নারীরাই। দেশের কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থানের পাশাপাশি তিল তিল করে কৃষি অর্থনীতির ভীত গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন নারীরা। এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রাণী সম্পদ খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৮৮ দশমিক ২ ও পুরুষের মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও এ খাতে মালিকানায় বেশ পিছিয়ে নারীরা। যার ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ মালিকানা পুরুষের হাতে। ছোট গবাদি পশুর ক্ষেত্রেও পুরুষের মালিকানা ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে হাঁস-মুরগির ক্ষেত্রে নারীর মালিকানা ৮৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
গাইবান্ধা সরকারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক, আনিছা আক্তার বেগম চৌধুরী বলেন, ঘর-গৃহস্থালি থেকে কৃষি সর্বত্র এতো অবদান রাখার পরেও বঞ্চনার তিলক সড়েনা নারীর কপাল থেকে। মজুরী বৈষম্য দুর করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে সচেতনতার পাশাপাশি প্রয়োজন রাষ্ট্র ও সমাজকে এগিয়ে আসা।
দেশের কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে এখনো দৃশ্যমান করা হয়নি নারীর শ্রম। কৃষিতে ঘাম ঝড়ালেও জাতীয় অর্থনীতিতে গণনার বাইরে থাকায় অবমূল্যায়িতই থাকছে নারীদের শ্রম। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত যাদের বিনিয়োগকৃত শ্রমে মজবুত হয় দেশের অর্থনীতি অধিকারের প্রশ্নে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয় তাদের অপেক্ষার প্রহর। কিন্তু এখনো মজুরী বৈষম্য আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে নারীদের।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, অন্যদিকে কৃষি খাতেও পুরুষের পাশাপাশি বাড়ছে নারীদের অংশগ্রহণ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আন্তর্জাতিক কৃষিব্যবস্থায় নারীর ভূমিকা নিয়ে স্ট্যাটাস অব উইমেন ইন অ্যাগ্রিকালচার সিস্টেম-২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কৃষিতে ২০০৫ সালে নারীর ভূমিকা ছিল ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা নয় দশমিক এক শতাংশ বেড়ে ৪৫ দশমিক তিন শতাংশে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বিশ্বে যা সর্বোচ্চ।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com