শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ বন্যা এবং নদী ভাঙ্গন জেলা হিসেবে গাইবান্ধা বেশ পরিচিত। এই এলাকায় বন্যা আসলে যেন শেষই হতে চায় না। দীর্ঘ মেয়াদী পাঁচ বার বন্যায় এবছর জেলার রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, ঘরের আসবাপত্র, গবাদি প্রাণী, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। চলতি বছরের বন্যায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর রোপা আমন ধান, সবজি এবং অন্যান্য ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়। অতিমাত্রা বন্যায় চর এলাকার জমিতে অধিক পরিমানে পলিমাটি জমায় বর্তমানে এবং আগামী দিনে সকল ধরনের ফসল উৎপাদনের সমৃদ্ধ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
জেলার ৭টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের ৩০০টি গ্রামের প্রায় ৯০ হাজার পরিবার বন্যার ভোগান্তিতে পড়ে। মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করেন। এবছর চর এলাকায় জমিতে ফসল লাগানোর আগেই পানির আগমন ঘটে ফলে চরাঞ্চলগুলির ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে শেষের দিকে কিছু জমিতে পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে ধান লাগালে কিছু জমির ধান আবার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায় । তবে সেটি খুব বেশি নয় বলে জানিয়েছে চরের কৃষক। বেশির ভাগ অঞ্চলেই ধানের ক্ষেত বেশ ভালই হয়েছে। চরাঞ্চলে বন্যাকালীন সময়ে ঘর-বাড়ির ক্ষয়-ক্ষতি হলেও পাহাড়ি ঢলে আর বৃষ্টির পানিতে ভেসে আসা পলিমাটি জমির উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আগামী দিনে রবিশস্য উৎপাদনে চর কৃষির সমৃদ্ধ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন উন্নত জাতের বীজের যোগান, কৃষি উপকরণ, সার, সেচ ব্যবস্থা এবং আর্থিক সহায়তা।
সরেজমিনে ফুলছড়ি এবং ফজলুপুর দুটি ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি, কালুরপাড়া, পিপুলিয়া, দক্ষিণ খাটিয়ামারি, তালতলা, মধ্য খাটিয়ামারি ভাজন ডাঙাসহ বিভিন্ন চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সবুজে ঘেরা প্রকৃতির অপরুপ দৃশ্য ধানের ক্ষেত। যা এই সময়গুলিতে চরাঞ্চলে সচরাচর দেখা যায় না। ঘুরতে ঘুরতে এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেল, এবছর অতি উচ্চতায় বন্যার পানি এলাকার আনাচে কানাচে প্রবেশ করায় প্রতিটি জমিতে এবং বাড়ির আশে পাশে ব্যাপক পরিমান পলি মাটি জমে কৃষি উৎপাদনে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করেছে। ফলে উচুঁ নিচু সকল জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনে সফলতা আসবে। লক্ষ্য করা গেছে, যে সকল জমির পানি নেমে গেছে সেখানে বর্তমানে আটাশ ধানের ব্যাপক আবাদ হয়েছে কোন ধরনের মড়ক না হলে এবছর চরাঞ্চলে আটাশ ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকরা। প্রায় সব গুলো চরের একই চিত্র। গানজিয়া ধানের চারা কিছুটা নষ্ট হয়েছে তবে ব্যাপক আকারে নয়। এছাড়া পানি নেমে যাওয়ায় কৃষক তাদের উর্বর জমিতে ভুট্টা, মরিচ, গম, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, আখ, মিষ্টি আলু, মাসকালাই, মুসুর ডাল, তিল তিশী, গোল বেগুন, শষা, লাউ, পিয়াজ, রসুন, বিভিন্ন ধরনের সীম ইত্যাদি শাক-সবজির চাষ করার প্রস্তুতির জন্য জমি তৈরীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। অনুমান করা হচ্ছে এবছর এই সকল শাক-সবজি চাষ করে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে শহরাঞ্চলে বাজারজাত করা সম্ভব হবে আর তখন সবজির বাজারের আগুন কিছুটা নেভানো সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান জানান, এবছর ৭টি উপজেলার কৃষির ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০০ কোটি টাকা। প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন ৬ হাজার হেক্টর, সবজি ১ হাজার হেক্টর এবং অন্যান্য ফসল ১ হাজার হেক্টর জমি। প্রস্তুতি হিসেবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপজেলা ভিত্তিক যে সকল উপজেলায় বন্যা হয় না সেই উপজেলার উচুঁ জমি ভাড়ায় নিয়ে আপদকালীন বীজতলা চাষ করে বীজের সংকট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই বীজ জেলার প্রান্তীক কৃষকদের সহায়তা প্রদান করা হবে।
চরএলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যায়বহুল হওয়ার পরেও গত বছর কৃষি উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধতা সফলতা দেখা গেছে। এবছর এটা আরও বেশি হবে বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। দিন দিন এই চাকা আরও বেশি ঘুরতে থাকলে স্থানীয়ভাবে চরকৃষির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে এবং সমৃদ্ধ সম্ভাবনার দিকে এগুতে থাকবে আমাদের চরকৃষির অর্থনীতি।
সরকারি বেসরকারি উদ্দ্যোগে চাহিদার ভিত্তিতে যাচাই বাছাই সাপেক্ষে যথাযথ উদ্দ্যোগ গ্রহন করলে এই সমৃদ্ধ সম্ভাবনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে স্থানীয় কৃষক নেতৃবৃন্দ মনে করেন।