শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৭ অপরাহ্ন

সাদুল্লাপুরে শ্রীমতির জীবন বাঁচে জিলাপির প্যাঁচে

সাদুল্লাপুরে শ্রীমতির জীবন বাঁচে জিলাপির প্যাঁচে

সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি ঃ শ্রীমতি ঊষারাণী (৬০)। তরণী বয়সে হারিয়েছেন স্বামীকে। আলোকিত জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। নির্মম পরিহাস! জীবনযুদ্ধে ছুটছিলেন জীবিকার সন্ধানে। এরই মধ্যে যোগ দেন একটি মিষ্টির দোকানে। ফুটপাতের এ দোকানেই কয়েক যুগ ধরে গুড়ের জিলাপি তৈরী করে দিয়ে যেটুকু পারিশ্রমিক পান, তা দিয়েই জীবন বাঁচে তার।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সাদুল্লাপুর বাজারে দেখা যায়, ঊষারাণীর জিলাপির তৈরীর চিত্র। এসময় চুলায় লাকড়ি জ্বালিয়ে আপন খেয়াল আর হস্তের তালে গুড়ের জিলাপি বানাচ্ছিলেন তিনি।
জানা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের খামার বাগচি গ্রামের মৃত জগনাথ চন্দ্রের মেয়ে শ্রীমতি ঊষারাণী। তার বয়স যখন ১৯ বছর, তখন বিয়ে হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাতিয়া গ্রামের সুবল চন্দ্রের সঙ্গে। এ বিয়ের এক বছর পরই কোলজুড়ে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান। দাম্পত্য জীবনে চলছিল তার সুখের সংসার। এরই মধ্যে মারা যায় স্বামী সুবল চন্দ্র। কোলের শিশুকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় তাকে। নেই স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতা। একেবারই থমকে যায় জীবন-জীবিকা। বাধ্য হয়ে আবারও বসবাস শুরু করে পিতার বাড়িতে। বাবা জগনাথ চন্দ্রও দিন আনে দিন খায়। এমতাবস্থায় জীকার সন্ধানে কোলের শিশুকে নিয়ে ছুটতে হয় এদিক-সেদিক। ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকে সন্তানটি।
একপর্যায়ে সাদুল্লাপুর বাজারের সাহেব উদ্দিন নামের একটি ফুটপাতের মিষ্টির দোকানে কাজ নেয়। সেখানে তৈরী করে দেয় গুড়ের জিলাপি। সেই সময়ে মজুরী ছিল তার ৩ টাকা। প্রায় ৪০ বছর ধরে একই দোকানে কাজ করে চলেছেন তিনি। বর্তমানের দিনমজুরী পান ১৫০ টাকা। এর আগে তার একমাত্র মেয়ে শিল্পী রাণীকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে নিজস্ব জায়গা-জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কোনমতে বসবাস করে আসছে। থাকার টিনসেড ঘরটিও জরাজীর্ণ অবস্থায়। সারাদিন পরিশ্রম করে ঘরে ভালোভাবে ঘুমাবেন, সেটিও সম্ভব হয় না তার। ঝুকিঁপুর্ন ঘরে ঝড়-বৃষ্টির আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটাতে হচ্ছে তাকে। এভাবে তরুণী বয়স থেকে স্বামীহারা হয়ে এখন বৃদ্ধা বয়স পর্যন্ত জীবন সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে ঊষারাণীর।
ওই মিষ্টির দোকানের বর্তমান মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দোকানে জিলাপির কারিগর হিসেবে ৪০ বছর ধরে কাজ করে চলেছে ঊষারাণী। দিনমজুরী হিসেবে আগে পেয়েছিলেন ৩ টাকা, এখন দেয়া হয় ১৫০ টাকা। এদিয়ে জীবনযাপন চলছে তার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে অসহায় শ্রীমতি ঊষারাণী বলেন, একটি সন্তান রেখে আমার স্বামী মারা গেছেন ৪০ বছর আগে। সেই থেকে একই দোকানে জিলাপি বানানো কাজ করছি। এখান থেকে যেটুকু পারিশ্রমিক পাই, তা দিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার থাকার কোন জায়গা-জমি নেই। পরের জমিতে ভাঙা ঘরে রাত যাপন করছি। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ চেয়েও তা আমার কপালে জোটেনি।
কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর গোফফার মিয়া জানান, ঊষারাণীর ব্যাপারটি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতা করা যেতে পারে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com