শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা দিবসের ৪র্থ বাষির্কী পালিত

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা দিবসের ৪র্থ বাষির্কী পালিত

স্টাফ রিপোর্টারঃ গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তিন সাঁওতাল হত্যার ৪র্থ বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সাঁওতাল হত্যা দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে শোক র‌্যালি, শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্বালন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, এএলআরডি ও জনউদ্যোগ যৌথভাবে এসব কর্মসূচি পালন করে। সংগঠনগুলো সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে ১ নভেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী আলোচনা সভা, মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে।
সপ্তাহব্যাপি কর্মসূচির শেষ দিনে সকাল সাড়ে ৮টায় অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পন ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন শেষে ব্যানার, বিভিন্ন দাবী দাওয়া সম্বলিত ফেস্টুন শোভিত এক শোক মিছিল সাঁওতাল পল্লী জয়পুর ও মাদারপুর গ্রাম থেকে বের হয়ে কাঁটামোড় হয়ে ১৫ কিলোমিটার রাস্তা প্রদক্ষিণ করে গোবিন্দগঞ্জ শহীদ মিনারে শেষ হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় গোবিন্দগঞ্জ শহীদ মিনারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শুরুতে শহীদ প্রতি সম্মান জানিয়ে ১মিনিট নিরবতা পালন করে। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- রবীন্দ্রনাথ সরেন, রেবেকা সরেন, এ্যাডঃ সিরাজুল ইসলাম বাবু, প্রবীর চক্রবর্তী, মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, এ্যাডঃ রফিক আহমেদ সিরাজী, শ্রীকান্ত মাহাতো, এ্যাডঃ মহসিন রেজা, বদিউজ্জামান, উদীচীর মাহমুদুল গণি রিজন, তাজুল ইসলাম, জাফরুল ইসলাম প্রধান, স্বপন শেখ, এ্যাডঃ বাবুল রবিদাস, অঞ্জলী রানী দেবী, সুনীল খালকো, সুফল হেমব্রম, প্রিসিলা মুর্মু, অলিভিয়া হেমব্রম প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৬ নভেম্বর-২০১৬ মহিমাগঞ্জ সুগার মিল কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে (কোর্টের আদেশ ব্যাতীত) আদিবাসীদের নির্মিত বসতবাড়িতে পুলিশ, প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের দ্বারা উচ্ছেদের নামে নিরীহ আদিবাসীদের ওপর হামলা, বসতবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং বর্বরোচিতভাবে গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে ও নির্যাতনে শ্যামল হেমরম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নিহত এবং অনেকেই গুরুতর আহত হন। কিন্তু ঘটনার ৩ বৎসর পেরিয়ে গেলেও মামলার উল্লেখ্য যোগ্য কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। পিবিআই তদন্ত করে গত ২৩/০৭/২০১৯ইং ৯০জন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়। কিন্তু মুল আসামীসহ ১১জনকে আসামী শ্রেণিভূক্ত না করায় ভিকটিম (বাদী পক্ষ) নারাজী দিলে ২৩/১২/১৯ তারিখে মামলাটি পুনরায় তদন্তভার সিআইডি’র উপর দায়িত্ব দেয়। সিআইডি’র ঢিলেঢালা তদন্ত কার্যক্রম ও কার্যকর তদন্ত না করায় ভিকটিম আদিবাসী সাঁওতালগণ চরম হতাশা ব্যক্ত করছে। ভিকটিম পক্ষ আশা করে যে, সিআইডি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত মুল আসামীসহ জড়িত সকল আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বক্তরা আরো বলেন যে, বিকল্প জায়গা থাকা সত্বেও কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহল কৃষি জমিতে তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প আদিবাসীদের পৈত্রিক সম্পত্তির উপর করার পায়তারা করছে। যাহা সম্পূর্ণ আদিবাসী সাঁওতালদের স্বার্থ পরিপন্থী। ফলে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সাঁওতাল বাঙালিসহ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান করা যাচ্ছে।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ঘটনার পর থেকে নির্যাতনের শিকার আদিবাসী সাঁওতালরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। গৃহহীন হয়ে তারা অসহায় দিনাতিপাত করছে। আহতরা চিকিৎসার অভাবে কেউ পঙ্গু, কেউ গুলির স্পিøন্টার শরীরে নিয়ে অসহ্য যন্ত্রনা মধ্যে কর্মক্ষমতা হারিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। নভেম্বরের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাসের বাণী শোনালেও তার কোনটিই আজো বাস্তবায়ন হয়নি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com