শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম

গোবিন্দগঞ্জে গুচ্ছগ্রামের সাঁওতালরা ঘড় ছাড়ছেন

গোবিন্দগঞ্জে গুচ্ছগ্রামের সাঁওতালরা ঘড় ছাড়ছেন

স্টাফ রিপোর্টারঃ গোবিন্দগঞ্জে গুচ্ছগ্রামের সাঁওতাল পরিবারের অনেকেই ঘড় ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় ঘর ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
পাঁচ বছর আগে উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের বেতারা গ্রামে ৭০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এসব ঘরে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাঁওতালদের পুনর্বাসন করা হয়। তাঁদের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা ছিল স্থানীয় প্রশাসনের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনো কোনো ঘরের চালের টিনে মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরেই তালা ঝুলতে দেখা গেছে। কোনোটির ভিটের মাটি ধসে যাচ্ছে।
সাঁওতালরা পূর্বস্থানে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যেখানে পুনর্বাসন করা হয়েছে, সেই জায়গাটি চরবেষ্টিত। এ কারণে কাছাকাছি কৃষি কাজের তেমন সুযোগ নেই। জীবিকার তাগিদে ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
৭০ বছর বয়সী খুকি মার্ডি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা। তিনি নিঃসন্তান। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১২ বছর আগে। তাঁর ডান হাত অচল। তিনি বলেন, ‘আগে দিনমজুর হিসেবে কৃষি কাজ করতাম। এখন বয়সের ভারে কাজকর্ম করতে পারি না। এখন খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। সরকারিভাবেও সাহায্য পাইনি।
আরেক বসবাসকারী জামলী পাহাড়ী (৬৫)। প্রায় ৯ বছর আগে স্বামী মারা যান। তিনি এলাকায় ধানসহ বিভিন্ন শস্য কুড়িয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেক সময় ঘরে খাবার না থাকলে মেয়েদের সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা তো ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারি না। সরকারিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা পেলে একটু ভালোভাবে থাকতে পারতাম।
কমলেশ সরেন, ম-ল টুডু, হেবল সরেন ও কয়েন সরেন থাকতেন গুচ্ছগ্রামটিতে। এখন তাঁরা সেখানে থাকেন না। তাঁদের দাবি, আত্মকর্মসংস্থান করার কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। সেখানে অন্য কোনো কর্মস্থান না থাকায় ঘর ছেড়ে চলে গেছেন।
গুচ্ছগ্রাম কমিটির সভাপতি যিশায়েল হেমরম বলেন, আমাদের পুনর্বাসনসহ আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে জীবিকার তাগিদে কেউ পূর্বস্থানে, আবার কেউ ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করছেন। বর্তমানে এখানে ২৫টি পরিবার রয়েছে। এখানে সরকারিভাবে তেমন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁরা অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
কাটাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জোবায়ের হাসান শফিক মাহমুদ গোলাপ বলেন, বেতারা গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত সাঁওতাল পরিবারের আত্মকর্মসংস্থানের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। বিষয়টি উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা করবেন।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এ এইচ এম তারিকুল শরীফ বলেন, গুচ্ছগ্রামের ঘরে বসবাসরত সাঁওতালদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঋণ সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম অবস্থায় তাঁদের ১০ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়ার কথা। কিন্তু ঘরে ছেড়ে যাওয়া ও নানা জটিলতায় তাঁদের ঋণের আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন দাবি করেন, পল্লী উন্নয়ন (বিআরডিবি) বোর্ডসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে ঋণ সুবিধার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যেসব পরিবার চলে গেছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। সেখানে অন্য সাঁওতাল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com