মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি পয়েন্টে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে চলছে দিনরাত বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে নদী থেকে বালু লুটের বাণিজ্যে মেতেছেন স্থানীয় বালু দস্যুর সিন্ডিকেট চক্র। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় স্থানীয় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। যদিও মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষে অভিযান চালানো হলেও বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়ে বরং তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই চলছে বালু উত্তোলন কার্যক্রম। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রশাসনের ভূমিকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালির নির্মাণাধীন ব্রিজের পূর্ব পাশেই করতোয়া নদীতে ৩টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। একটু দুরেই সমসপাড়া গ্রামেও একাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার চিত্র দেখা গেছে। শুধু কাটাখালি ব্রিজ ও সমসপাড়াই নয়, করতোয়া নদীর অন্তত ২০টি পয়েন্টে ড্রেজার দিয়ে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে পুলপাড়া, চকরহিমারপুর, বগুলাগাড়ী, খলসি, কাইয়াগঞ্জ, শাকপালা, কাটাখালি, ধর্মপুর ও ফুলবাড়ি এলাকাতে। বড় ড্রেজার মেশিন কোথাও শক্তিশালী বোমা ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করছে বালু খেকো সংঘবদ্ধ একটি চক্র। নদীতে বসানো ড্রেজার মেশিনের সঙ্গে মোটা পাইপ স্থাপন করে বালু তুলে ১ থেকে ২ কিলোমিটার দুরেও সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী।
স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা জানান, বছরের পর বছর ধরে করতোয়া নদীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব। দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন বৃদ্ধি ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও বিভিন্ন এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক। অবাধে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে কাটাখালি ব্রিজ, বাঁধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ছাড়াও নানা স্থাপনা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষে দুয়েকটা অভিযান চললেও বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়ে বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তোলিত এসব বালু ফসলি জমিসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বালু পরিবহণে দিনরাত শতশত ট্রাক্টর (মহেন্দ্র) ও ড্রাম্প ট্রাক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন সড়কে। এতে বিকট শব্দ আর ধুলোবালিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তোলিত অধিকাংশ বালু সরকারি-বেসরকারী অবকাঠামো নির্মাণ এবং রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ছয় লেনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। নামে-বেনামী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ কতিপয় ব্যক্তিদের কাছে বালু বিক্রি করে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বালু ব্যবসায়ী একটি সিন্ডিকেট চক্র। তবে মহাসড়কের ছয়লেন কাজ শুরুর পর থেকেই নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের চিত্র বেড়েছে।