শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম

গাইবান্ধায় অপসারণের নির্দেশের পরও চলছে ইটভাটা নির্মাণ

গাইবান্ধায় অপসারণের নির্দেশের পরও চলছে ইটভাটা নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা সদর উপজেলার খামার বোয়ালি গ্রামে অবৈধভাবে নির্মিত হচ্ছিল ইটভাটা। এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এসময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গত ১৬ জানুয়ারির মধ্যে নির্মানাধীন ভাটা অপসারণের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের সাতদিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাটা অপসারণ করা হয়নি। উল্টো ইটভাটা নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দুরে খামার বোয়ালি গ্রাম। গ্রামটি সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের অন্তর্গত।
গত শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, চারদিকে সবুজের সমারোহ। ফসলের মাঠ। গ্রামের তিন ফসলি অন্তত ছয় একর জমিতে ইটভাটা নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে ইট পোড়াতে চুলা নির্মাণ কাজ চলছে। ভাটার জায়গায় কিছু ইট ও মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ইট তৈরির জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এলাকাবাসি জানায়, এই গ্রামের তিন ফসলি প্রায় ছয় একর জমি ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করছেন গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আয়ান মিয়া। তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাটা নির্মাণ করছেন। এনিয়ে চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লিখিত অভিযোগ দেন এলাকাবাসি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও মোঃ আবদুর রাফিউল আলমের নির্দেশে গত ১০ জানুয়ারি ভাটা মালিকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ শহিদুল ইসলাম ১৬ জানুয়ারির মধ্যে ভাটাটি অপসারণের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের সাতদিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত ভাটা অপসারণ করা হয়নি। উল্টো ইটভাটা নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এই ভাটার রেজিষ্ট্রেশন, পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। নেই জেলা প্রশাসনের অনুমতি। ভাটাটি নির্মিত হলে পরিবেশ নষ্ট হবে। ভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছেন না।
নির্মাণাধীন ভাটা থেকে প্রায় ৬০০ মিটার দুরে কয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, এটি নির্মিত হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি পরিবেশ দুষণের কারণে ওই এলাকার তিন ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অভিযোগকারি খামার বোয়ালি (কয়া ছয়ঘরিয়া) গ্রামের শাহজাহান মিয়া বলেন, জনবসতিপুর্ণ এলাকায় ভাটা নির্মিত হলে আবাদি জমি, ফসল ও গাছপালা নষ্ট হবে। ভাটা নির্মাণ বন্ধে ইউএনওকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। একই গ্রামের আবদুস সালাম বলেন, ভাটায় দীর্ঘদিন ধরে ইট পোড়ানো হলে এলাকার অনেক গাছপালার পাতা মরে যাবে। প্রতিবছর ফসলের ক্ষতি হবে। তারপরও অবৈধভাবে ভাটা হচ্ছে। আরেক অভিযোগকারি ফিরোজ কবির বলেন, নিয়মানুযায়ী ভাটা স্থাপনে রেজিষ্ট্রেশন, পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামুলক। কিন্তু ওই ভাটা মালিকের কোনটিই নেই। উপরন্ত প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে কয়েকদিন ধরে পুনরায় ভাটার কাজ চলছে।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা সদর ইউএনও মোঃ আবদুর রাফিউল আলম বলেন, জরিমানা আদায়ের পর নির্মানাধীন ভাটার চুলা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরও কাজ চললে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব বিষয়ে ইটভাটা মালিক আয়ান মিয়া মুঠোফোনে দাবি করেন, প্রশাসন অপসারণের নির্দেশ দেয়নি। মৌখিকভাবে বলছিলেন, সাতদিনের মধ্যে সমঝোতা করে ফেলান। যাদের জমি ইজারা নেওয়া হয়, তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। তাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাটা স্থাপনের অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com