শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

সংস্কারের অভাবে গাইবান্ধার ৩৫ কিলোঃ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে

সংস্কারের অভাবে গাইবান্ধার ৩৫ কিলোঃ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে

স্টাফ রিপোর্টার ঃ সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশটি স্থানে মেরামত কাজ না করায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধটির বেশিরভাগ অংশের অবস্থা এখন বেহাল। এর আগে গত মাসে উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আল মারুফ এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল বাঁধটির ২৬ কিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করে ৩১টি স্থান বেশি ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই অবস্থার কারণে আসছে বন্যায় বাঁধ ভেঙে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলাকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে ১৯৬২ সালে উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চ-ীপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণে সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়ন পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিবছর বন্যার সময় হলেই শুধু বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণস্থানগুলো মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া এর বাইরে শুস্ক মৌসুমে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আর কোনো কাজ করতে দেখা যায় না। সংস্কার, মেরামত, সংরক্ষণ না করায় বাঁধটির অন্তত ৫০টি স্থান ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে হুমকির মুখে ষাট বছরের পুরাতন বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির ডানতীর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের কামারজানি হতে বামতীর তারাপুর ইউনিয়নের ঘগোয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার লম্বা। এর মধ্যে প্রায় ৫০টি স্থান ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উপজেলা শহরের সাথে পূবাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই বাঁধ। বর্তমানে বাঁধটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই ৮টি ইউনিয়নের লোকজন এখন ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে শোভাগঞ্জ ভায়া বালার ছিঁড়া হয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করছেন। বেলকা ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক রাজেন্দ্র কুমার সরকার জানান, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাঁধটি মেরামত এবং সংস্কার করা হয়নি। সে কারণে বর্তমানে বাঁধটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত বছর বন্যায় বেলকা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থান ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় প্রশাসন বাঁশের প্যালাসাইটিং দিয়ে কোনমতে মেরামত করেছে। বর্তমানে বাঁধটির অবস্থা খুবই খারাপ। আসছে বন্যায় বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাঁধটি ঝুকিপূর্ণ এবং হুমকির সম্মুখিন হওয়ায় বর্তমানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সে কারণে ২০ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা ও জেলা শহর হতে মালামাল এনে ব্যবসা করতে হচ্ছে। বাঁধটি সংস্কার ও মেরামত একান্ত প্রয়োজন। বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি স্থান বাঁধটির জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। গত বছর বন্যার সময় ইউনিয়নের ১০টি স্থানে বন্যার পানি বাঁধের গর্ত দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। তাৎক্ষণিক মেরামত করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাঁধটি মারাত্মকভাবে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত এক মাস ধরে বাঁধটির উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সে কারণে কাপাসিয়া, শ্রীপুর, চ-ীপুর, হরিপুর, কঞ্চিবাড়ি, শান্তিরাম বেলকা ইউনিয়নের লোকজন ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলা শহরে যাওয়া আসা করছে। উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, গত সোমবার উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বাঁধটির প্রায় ৩১টি স্থান ঝুকিপূর্ণ। বন্যার সময় যে কোন মুহূর্তে ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে আগাম পরিদর্শনপূর্বক মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মেরামত এবং সংস্কারের অভাবে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com