রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন

ইউপি সদস্য হত্যাকান্ডে উত্তাল লক্ষীপুর

ইউপি সদস্য হত্যাকান্ডে উত্তাল লক্ষীপুর

স্টাফ রিপোর্টারঃ সদ্য বিজয়ী ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ মাষ্টারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে গাইবান্ধার সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে ব্যাপক উত্তাপ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হত্যাকারী আরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। অবরোধে বিক্ষুদ্ধ জনতার সঙ্গে এলাকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরাও অংশ নেয়। দুপুরে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ এলাকাবাসী অংশ নেন।
শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের লক্ষ্মীপুর বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে তারা। বিক্ষোভকারীরা সড়কের এক কিলোমিটার পথ জুড়ে অবস্থান নেয়। এসময় তারা বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুড়ি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকে। এতে সড়কের উভয় পাশে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে।
এর আগে, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আব্দুর রউফ তার বন্ধু রুহুল আমিনের সাথে মোটরসাইকেলে করে লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি একটি ভাঙা ব্রিজ পায়ে হেঁটে পার হচ্ছিলেন। এ সময় একই গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে আরিফ মিয়া নামে এক বখাটে যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিছন থেকে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ মাস্টারের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রউফের মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় আরিফ। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রউফকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকে আরিফ মিয়া পলাতক রয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপের অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন আব্দুর রউফ। এছাড়া আব্দুর রউফ লক্ষ্মীপুর স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি গোবিন্দপুর মাগুরাকুটি গ্রামের মৃত্যু ফজলুল হকের ছেলে।
লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আলমগীর মিয়া, জহুরুল হক, গর্ভনিং বডি সদস্য কার্জন চৌধুরী বলেন, আবদুর রউফ অত্যন্ত বিনয়ী ও সদালাপী ছিলেন। সহকর্মী হিসেবে তিনি যেমন আমাদের বন্ধুর মতো তেমনি শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
মনোয়ারুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভাবতেই পারিনা এরকম একটি নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে স্যারকে এভাবে অকালে চলে যেতে হবে। হত্যাকারীর গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।
মঞ্জুরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, স্যারকে মেরে ফেলার খবর পেয়ে সকাল থেকে দোকান বন্ধ রেখে হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হয়েছি। এলাকার সকল ব্যবসায়ী স্বতঃফুর্তভাবে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে এই বিক্ষোভে শরিক আছেন।
এদিকে, ঘটনার জেরে শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মাগুরার কুটি গ্রামে আরিফের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় আরিফের আস্তানা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় একটি ক্লাবঘরও গুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
গাইবান্ধা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আবদুর রউফ জানান, ইউপি সদস্য হত্যার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আব্দুর রউফের ওপর হামলা হতে পারে। ঘাতক আরিফকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাকে গ্রেপ্তার করলে হত্যার কারণ জানা যাবে। এছাড়া হত্যার ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com