রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
সরকার শাহাদত হোসেন : বাংলার গ্রামীণ জীবনের অন্যতম প্রধান বাহন ছিল গরুর গাড়ি। একসময় সকাল বেলা মাঠের আইল দিয়ে গরুর গাড়ির টুংটাং ঘণ্টার শব্দ শুনে ঘুম ভাঙতো গ্রাম বাংলার মানুষদের। ধুলো মাখা মাটির রাস্তায় ছুটে চলা গরুর গাড়ি শুধু পরিবহনের মাধ্যম ছিল না, ছিল মানুষের আবেগ ও ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ সেই ঐতিহ্যবাহী বাহন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
এক সময় গ্রামের কৃষক ধান, গম, আখ কিংবা বিভিন্ন শাকসবজি বাজারে নিয়ে যেতেন গরুর গাড়িতে। বিয়ের শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে মেলা-উৎসবেও গরুর গাড়ির ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। শিশুদের কাছে এটি ছিল আনন্দ যাত্রা গাড়িতে চড়ে গান গেয়ে যাওয়ার মধুর স্মৃতি আজও অনেকের হৃদয়ে জাগরুক। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই আনন্দ আজ শুধু স্মৃতির পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মটরযান, ভ্যান, অটোরিকশা ও ট্রাক যখন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজলভ্য হয়ে উঠলো, তখন গরুর গাড়ি ধীরে ধীরে হারাতে শুরু করল তার ব্যবহার। গতি আর সময়ের প্রতিযোগিতায় ধীরগতির এই বাহন পিছিয়ে পড়লো। আধুনিকতার ঝড় গ্রাস করে নিল ঐতিহ্যের এই জীবন্ত প্রতীককে। এখন আর রাস্তা দিয়ে হাঁটলে দেখা মেলে না সেই চেনা দৃশ্য দুই গরুর জোয়াল টেনে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা কাঠের গাড়ি।
তবুও গরুর গাড়ির কদর পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। কিছু গ্রামীণ এলাকায় এখনো কৃষিপণ্য পরিবহনে, কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান-উৎসবে প্রতীকীভাবে ব্যবহার হয়। এছাড়া পর্যটনকেন্দ্রে বা ঐতিহ্য প্রদর্শনীতে গরুর গাড়ি এখনো দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। তবে তা মূলত শৌখিন ও প্রদর্শনীমূলক, আর নয় গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য বাহন।
আজকের প্রজন্ম শুধু বইয়ের পাতায় বা বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখে শুনে গরুর গাড়ির ইতিহাস জানে। যারা দেখেছে, তাদের চোখে আজও ভাসে ধুলো উড়িয়ে চলা সেই বাহন। সত্যিই আফসোস, একসময় যে বাহন ছিল গ্রামীণ জীবনের প্রাণ, তা আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।