সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩১ অপরাহ্ন
সাদুল্লাপুর থেকে খোরশেদ আলম : উপমহাদেশের বিখ্যাত নাট্যকার তুলসী লাহিড়ী। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে কালজয়ী এ মহাপুরুষের স্মৃতি। সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নে ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ লাহিড়ী, মায়ের নাম শৈলবালা দেবী। বাবার অনুপ্রেরণায় সাংস্কৃতিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে উপমহাদেশে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
অভিনেতা, নাট্যকার, পরিচালক, গীতিকার ও চলচ্চিত্রকার তুলসী লাহিড়ীর পৈতৃক ভিটায় একটি স্মৃতি সংগ্রহশালা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি করছেন স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা। গাইবান্ধার নাট্যকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী এবং শিল্প-সাহিত্যানুরাগীরা মনে করছেন, এ উদ্যোগের মাধ্যমে তুলসী লাহিড়ীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে, যা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
সরেজমিনে জানা যায়, স্মৃতি বিজড়িত ও কালের সাক্ষী জমিদার বাড়িটিকে ঝোঁপ-জঙ্গল আর গাছপালা ঘিরে ফেলেছে। একসময়ের ঐতিহ্যবহনকারী শৈশব-কৈশোরের ধুলো-বালি মাখা নানা স্মৃতি সম্বলিত তুলসি লাহিড়ীর আদি নিবাসটি অযত্নে-অবহেলায় আজ ম্লানের পথে। তাঁর আদি নিবাসের নজরকাড়া স্মৃতি চিহ্নগুলো ধ্বংসলীলায় মুছে যাচ্ছে। ফলে বাড়িটির দিকে কেউ আর ফিরে তাকান না। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলসী লাহিড়ীর বাড়িটি অচেনা-অজানা।
শিক্ষার্থী কায়সার আদীব বলেন, এত বড় একজন মহাপুরুষের বাড়ি গাইবান্ধায়, আমরা তা জানতাম না। আজ তাঁর বাড়িতে ঘুরতে এসেছি। ছাত্র হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করছি। স্মৃতি হিসেবে একটি সংগ্রহশালা স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছি।’
নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল গফুর বলেন, নলডাঙ্গার জমিদার বাড়িতে সংগীত জগতের পথিকৃৎ তুলসী লাহিড়ীর জন্ম। সংস্কার ও মেরামতের অভাবে জমিদার বাড়িটির পুরোনো স্মৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বে তুলসি লাহিড়ীর জন্মভূমির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
গাইবান্ধা থিয়েটারের সভাপতি আলমগীর কবির বাদল বলেন, তুলসী লাহিড়ীর বসতবাড়িতে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে। এই কেন্দ্রে তুলসী লাহিড়ীর জীবন ও কর্মের ওপর গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে। নাট্যচর্চা ও চলচ্চিত্রবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা যাবে। এর মাধ্যমে তুলসী লাহিড়ীর আদর্শ ও শিল্প ভাবনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
উদীচী গাইবান্ধা জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত এই গুণী শিল্পীর জন্মভিটা আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে এখনো পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এ অবস্থায় তাঁর পৈতৃক বসতবাড়িতে একটি স্মৃতি সংগ্রহশালা স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।