রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন
সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি: দৃষ্টিহীন মশিউর রহমান লিমন। বয়স ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে । শুনে-শুনে মুখস্থ করেছেন কুরআন। এখন সেই কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে ছুটে চলেন বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে। ইতিমধ্যে শিক্ষা দিয়েছেন ৭০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে। এভাবে দেড় যুগ ধরে কুরআনের আলো ছড়াচ্ছে অন্ধ হাফেজ মশিউর।
সম্প্রতি সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম (পঁচার বাজার) জামিয়াতুল হোসাইনিয়া মারকাজুল উলুম হাফিজিয়া কওমি মাদরাসা ও এতিমখানায় দেখা গেছে- এই হাফেজে কুরআনের পাঠদানের দৃশ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মশিউর রহমান লিমন। চোখে না দেখলেও গত ২০০১ সালে একটি মাদরাসা শিক্ষকের কাছে কুরআন পাঠ শুনে শুনে হাফেজ হন তিনি। তখন থেকে বিভিন্ন মাদরাসা ও গ্রামে গিয়ে কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ থেকে সামান্য কিছু হাদিয়া নিয়েই সংসার চলে তার ।
স্বজনরা জানান, প্রত্যেক দিন ভোর হওয়ার পরপরই মাদরাসার দিকে তড়িঘড়ি করে ছুটে যান অন্ধ হাফেজ মশিউর রহমান লিমন। কখনও একা আবার কখনও বা কারো সাহায্য নিয়ে হেঁটে বের হন। এরপর মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দেন কুরআনের শিক্ষা। তার তিন ছেলে, স্ত্রী ও তার মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার। এলাকার মানুষের কাছে অন্ধ হাফেজ নামে বেশ পরিচিত তিনি। এলাকায় যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে তাকে দাওয়াত করে স্থানীয়রা। সেইসঙ্গে বিনা পারিশ্রমিকে ইসলামী জলসায় কুরআনের আলো ছড়িয়ে দেন তিনি। কুরআন প্রচারের জন্য এলাকার মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার জীবন খুবই সংগ্রামের। খুব কষ্ট করে হেঁটে মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান এই হাফেজ।
শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম বলেন, হুজুরের ক্লাশ করে অনেক ভালো লাগে। সেইসঙ্গে তার কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ আমরা। বিশেষ করে তার আজান। তার মাধ্যমে শত শত ছাত্র কুরআন শিখেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ মিয়া বলেন, মশিউর আমার বন্ধু। আমার চোখ থাকতেও আমি কুরআন পড়তে জানি না, তবে সে জানে। সে অন্ধ হয়েও যেভাবে আখিরাতের জন্য কাজ করছে, তা দেখে আমি অবাক হই। সে আমাদের গ্রামের অহংকার।
সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু বলেন, মশিউর রহমান অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের লোক। অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করেই চলতে হয় তাকে। মশিউরকে পরিষদের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা করা হয়।