রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে গাইবান্ধা জেলার যাত্রীরা বাস মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ঢাকাগামী বিভিন্ন বাসে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, কাউন্টার থেকে শুরু করে টিকিট পর্যন্ত চলছে অনিয়ম আর হয়রানি। অথচ নির্ধারিত ভাড়ার কোনো অনুসরণ নেই, নেই প্রশাসনের কার্যকর তদারকিও।
সরেজমিনে গাইবান্ধা শহরের আল হামরা, অরিণ, শ্যামলীসহ মফিজ কাউন্টারগুলো দ্বিগুন-তিনগুন ভাড়া নিচ্ছে। পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর-নলডাঙ্গার বিভিন্ন বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, উপচে পড়া ভিড়। কাউন্টার মাস্টাররা টিকিট দিতে অনীহা দেখালেও অনুরোধ জানালে ‘বিশেষ শর্তে’ টিকিট দিচ্ছেন। শর্তগুলোও আশঙ্কাজনক।
যাত্রীদের অভিযোগ, প্রথমে বলা হয় টিকিট নেই। পরে চাপ দিলে বলা হয় বাড়তি ভাড়ায় টিকিট দেওয়া যাবে, তবে এ নিয়ে কাউকে কিছু বলা যাবে না। অনেক সময় হুমকিও দেওয়া হয় ভাড়া নিয়ে কথা বললে মাঝপথে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে।
টিকিটে নেই নাম, ঠিকানা, সময় কিংবা সঠিক ভাড়া ঃ বিক্রি করা টিকিটে যাত্রীর নাম, গন্তব্য, ছাড়ার সময় বা ভাড়া কোনোটাই লেখা থাকে না। কোনো টিকিটের উল্টো পৃষ্ঠে লেখা থাকে ভাড়া ৫০০ টাকা, অথচ ‘জমা’ দেখানো হয় ১ হাজার টাকা বা তার বেশি। এতে টিকিটের প্রকৃত মূল্য নিয়ে তৈরি হয় বিভ্রান্তি ও অনিয়ম।
এক কাউন্টার মাস্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাস ভাড়া ১ হাজার ৫০০ টাকা। তবে টিকিটে ভাড়া ৫০০ টাকা লেখা থাকে। কারণ দেখানো হয় যাত্রীর কাছে খুচরা টাকা ছিল না, পরে গাড়িতে ৫০০ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’
গাড়ি নেই, তবু চলছে টিকিট বিক্রি ঃ বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের হাসানগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি কাউন্টারে দেখা গেছে, কাউন্টার খোলা থাকলেও সড়কে কোনো বাস নেই। গাড়িগুলো দূরে কোথাও রাখা হয়েছে। যাত্রী ছাড়া কেউ টিকিট কিনতে চাইলে বলা হচ্ছে, ‘গাড়ি যাবে না’। একই চিত্র সাদুল্লাপুর ও নলডাঙ্গাতেও।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, প্রতিবছর একই ভোগান্তি ঃ ঢাকাগামী যাত্রী রাজু মিয়া জানান, বাইপাস এলাকার সব কাউন্টারে ঘুরেও নির্ধারিত ভাড়ায় টিকিট পাননি। বাধ্য হয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে দুইটি টিকিট কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ঈদেই এমন হয়। এভাবে চলতে থাকলে আর গ্রামে আসবো না।’
সেলিম মিয়া নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘২ হাজার টাকা দিয়ে দুইটি টিকিট নিয়েছি, কারণ সিট পেছনে ছিল। একটু কমে পেয়েছি।’
গার্মেন্টস কর্মী একরামুল হক বলেন, ‘বেলকা বাজার, পাঁচপীর বাজার, হাসানগঞ্জ সব জায়গাতেই যোগাযোগ করেছি। কেউ ১ হাজার ৪০০ টাকার নিচে দিচ্ছেন না। অবশেষে বাধ্য হয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়েছি।’
সাদুল্লাপুরের বাসিন্দা সাজ্জাদুর রহমান ও মোকছেদুল মোমিন বলেন, ‘নলডাঙ্গা কাউন্টারে ঢাকার ভাড়া ৪০০ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। অথচ দেখার যেন কেউ নেই।’
কর্মচারীদের বক্তব্য: মালিকের আদেশ পালন করি ঃ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাউন্টার মাস্টার বলেন, ‘আমরা শুধু চাকরি করি। মালিক যেভাবে বলেন, আমরা সেভাবেই টিকিট বিক্রি করি।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ট্রাক ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী, ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কেউ ১-২শ টাকা বেশি নিচ্ছেন কিনা, তা আমাদের জানা নেই।’
প্রশাসনের অভিযান, জরিমানা আদায় ঃ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ট্রেজারি শাখা) মোহাম্মদ মুনতাসির মারুফ বলেন, ‘ঈদ-পরবর্তী সময় কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ অন্যান্য অনিয়মের কারণে শনিবার ২৯টি মামলায় মোট ৭৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বেশি টাকায় টিকিট পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদের জানা নেই।