বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন
সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ খোলা বাজারের চেয়ে সরকারি রেট কম, অটো রাইস মিল চালু, হাসকিং চাতাল ব্যবসা বন্ধ, খাদ্য গুদামের অনিয়মসহ নানাবিধ কারণে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ঝুলে গেছে। অটো রাইস মিল এখন ধান ও চাল সংগ্রহের একমাত্র ভরসা। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় একটি অটো মিলসহ ১২০টি হাসকিং চাতালের মধ্যে এখন ৮৫টি চাতাল বন্ধ রয়েছে। চলতি মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহের জন্য একটি অটো মিলসহ ৩৫টি হাসকিং চাতালের সাথে খাদ্য গুদামের চুক্তি হয়। চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা পুরণ হলেও ৫২ দিনে এককেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গত বছরের ১৭ নভেম্বর হতে আগামি ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপজেলার সুন্দরগঞ্জ ও বামনডাঙ্গা খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহের লক্ষামাত্রা ১ হাজার ২৩ মেট্রিক টন এবং ধানের লক্ষা মাত্রা ১ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ২৭০ মেট্রিক টন এবং এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে চালের কেজি ৪৭ টাকা এবং ধান ৩৩ টাকা।
অটো রাইস মিল চালু, খেলা বাজারের চেয়ে সরকারি রেট কম এবং হাসকিং চাতাল ব্যবসা বন্ধসহ নানাবিধ অনিয়মের কারনে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান ঝুলে গেছে দাবি করেন উপজেলা চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি শাহাদৎ হোসেন আনন্দ। তার ভাষ্য সরকারি ভাবে অটো রাইস মিল মালিকদের বরাদ্দ দিচ্ছে। সে কারণে হাসকিং চাতাল ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হচ্ছে। বরাদ্দ না পাওয়ায় দিন দিন ব্যাংকে ঋণের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় অনেক চাতাল ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে গেছে। তিনি বলেন বর্তমান খোলা বাজারের প্রতিকেজি ধান ৩৭ হতে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারি রেট ৩৩ টাকা। সাধারন কৃষক, খুচরা ব্যবসায়ী এবং চাতাল মালিকগণ লোকসান করে খাদ্য গুদামে ধান দিবে না।
উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের হক চাল এবং নাজমা চাল কলের মালিক শামসুল হক বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনি কোন বরাদ্দ পান না। ব্যবসা না থাকায় ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় তিনি চাতাল বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারের লোকজনের সাথে অটো রাইস মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে সব বরাদ্দ তারা নিয়ে নিচ্ছে। হাসকিং চাতাল মালিকরা আর বরাদ্দ পাচ্ছে না। এছাড়া সরকারি রেট খোলা বাজারের চেয়ে কম। সে কারনে ধান সংগ্রহ হচ্ছে না।
উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের চাতাল মালিক নুরুল হক সরকার বলেন, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাগণ অটো রাইস মিল মালিকদের সাথে গোপনে আতাত করে বরাদ্দ তাদের নামে দিয়ে দেন। সে কারনে হাসকিং চাতাল মালিকগণ এখন ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ধান ও চালের বিল করতে গিয়ে ডিসি ফুড অফিস থেকে উপজেলা খাদ্যগুদামে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়।
তিন বছর ধরে চাতালের কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছেন চাতাল শ্রমিক হেলেনা বেগম। তিনি বলেন, মালিকের ব্যবসা না থাকায় সপ্তাহে ৪-৫দিন কাজ বন্ধ থাকে। তা দিয়ে সংসার চলে না, সে কারনে চাতালের কাজ ছেড়ে দিয়ে রাজ মিন্ত্রীর জোগালির কাজ করছি। চাতাল ব্যবসা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর ধান পাওয়া যায় না।
অনেক চাতাল ব্যবসায়ীর সিসি লোন এখন বন্ধ রয়েছে জানান সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শাখার ম্যানেজার আব্দুল হাদী। তিনি বলেন অনেক সিসি লোন গ্রাহক দীর্ঘদিন হতে লেনদেন না করায় তাদের লোন খেলাপি হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে নোটিশ দেয়া হয়েছে।