মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৪২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাইবান্ধা শীতের সবজি চাষ দেড় মাস পিছিয়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার সবজি চাষ কমেছে। এদিকে সার, কীটনাশক সংকট ও শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। অন্যদিকে কয়েক দফা বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ।
গাইবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হলেও এ বছর তা কমে ৬ হাজার ৯৪৭ হেক্টরে নেমেছে। সম্প্রতি তিন দফায় বন্যায় জেলায় অন্তত ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছর ৬ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে সবজির চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৭১৩ হেক্টর জমিতে চাষ সম্পূর্ণ হয়েছে।
সরেজমিন পলাশবাড়ী উপজেলার কাশিয়াবাড়ী মাঠে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ খেতে কৃষকরা সবজির পরিচর্যা করছেন। অনেকে আগাম আমন ধান কেটে ওই জমিতে সবজি চাষের জন্য প্রস্তুত করছেন।
কাতলী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা জানান, তাদের এলাকায় প্রায় সারা বছর পটল, কপি ও করলার চাষ হয়। এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষ করেছেন। গত বছরে এই সময়ে সবজি বাজারে তুলতে পারলেও এবার অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ওই সবজি দেড় মাস পিছিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে সবজি গাছ মারা গেছে। এতে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। শীতের শুরুতে সবজির দাম বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু এবার সময়মতো সবজি বাজারে তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন।
কৃষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। এ ছাড়া দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি করেছি। দেড় বিঘা জমিতে কপি চাষে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু এই কপি যখন বাজারে তুলব, তখন এর দাম পাওয়া যাবে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এই সবজি এক মাস আগে বাজারে তুলতে পারলে খরচ বাদে, প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হতো। কিন্তু সেটা আর হবে না।
কৃষক জাইদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, জমিতে জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সারও দিতে হয়। কিন্তু বাজারে সার কিনতে গেলে সার পাওয়া যাচ্ছে না। সার পাওয়া গেলেও তা অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কিটনাশকেরও দাম বেড়েছে গেছে। একই সঙ্গে জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি আগের চেয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। এতে আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আমাদের প্রণোদনার আওতায় না আনে, তাহলে আগামীতে এ অঞ্চলে অনেক চাষি ঝরে পড়বেন। তারা বিকল্প হিসেবে অন্যকিছু চাষ করতে বাধ্য হবেন।
কৃষক সাইফুল মিয়া জানান, এবার সবজি চাষে তাদের প্রচুর খরচ বেড়েছে। উচ্চমূল্যে সার ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে। এতে চাষাবাদ করতে হিমশিমে পড়েছেন। গত বছর সবজি চাষে লাভ হয়েছিল। কিন্তু এ বছর মরিচ ও পটলসহ শত শত বিঘা জমির সবজি পোকা লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তারা চরম লোকসানের শঙ্কায় আছেন। এর পরও লাভের স্বপ্ন নিয়ে খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপপরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর শীতের সবজি চাষে কিছুটা বিঘœ ঘটেছে। সামনে কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, চাষিরা বাম্পার ফলন পাবেন। তারা উপযুক্ত সময়ে ভালো দামে সবজি বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। এজন্য কৃষকদের পরামর্শ ও কৃষি সহায়তা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।