শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন

সুন্দরগঞ্জের হাটে নিজেকে বিক্রি করতে আসেন অসহায় মানুষগুলো

সুন্দরগঞ্জের হাটে নিজেকে বিক্রি করতে আসেন অসহায় মানুষগুলো

সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি: দাস প্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনও মানুষ কেনা-বেচার হাট বসে সুন্দরগঞ্জে। ভোরবেলা থেকে মানুষ আসা শুরু করে এ হাটে। অপেক্ষায় থাকেন নিজেকে বিক্রির জন্য। ক্রেতা এসে পছন্দ ও দরদাম করে নিয়ে যান তাদের।
গতকাল বুধবার ভোরবেলা থেকে সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিস্তা বাজার মোড়ে শুরু হয় মানুষের আনাগোনা। কেউ আসছেন বাইসাইকেলযোগে, কেউবা হেঁটে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এসব মানুষের কারও কাছে আছে কোদাল, কেউ বা এনেছেন পাসুন বা নিড়ানি, কারো কাছে ডালি কিংবা কারও হাতে কাস্তে। এই মোড়কে ঘিরে আলাদা আলাদা দলবেঁধে বসে থাকা মানুষগুলো অপেক্ষা করছেন ক্রেতা বা খরিদ্দারের।
খরিদ্দার এসে পছন্দমতো লোক, সংখ্যা ও দাম বললে নির্দিষ্ট একটা কাজ বা পুরো দিনের জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেবে এই মানুষগুলো। আর এভাবে বিক্রি করতে পারলে তবেই হবে তাদের পরিবারের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা হয়।
প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিদিন ভোরে সুন্দরগঞ্জের তিস্তা বাজার মোড়ে বসে নামহীন শ্রমজীবীদের এ হাট। চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত। কৃষি ও ভবন নির্মাণ শ্রমিকেরা আসেন এখানে। দিন চুক্তিতে তাদের কিনতে আসেন হরিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, বেলকা, তারাপুর, দহবন্দসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থরা। দরদাম ঠিক হওয়ামাত্র শ্রমিকেরা রওনা হন মালিকের কাজে। দিন শেষে মজুরি বুঝে পেলে এখান দিয়েই ফেরেন বাড়ি। সঙ্গে কিছু টাকা এবং সদাই। এরপর রাত শেষে আরও একটি ভোরের অপেক্ষা।
সরেজমিন হাটের ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায়, এক শ্রমিক সামনে এসে সালাম দিয়ে বললেন, মামা কামলা লাগবে? কত দিবেন?’ পরে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। নাম মোস্তাফিজুর রহমান। উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের সোনারায় গ্রাম থেকে সেখানে এসেছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর বলেন, সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় খরচের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে বড় মেয়ে। কী কী বাজার করতে হবে, তাও বলে দিয়েছে। বড়রা লবণ–মরিচ দিয়েই ভাত খেয়ে ফেলতে পারে; কিন্তু বাচ্চারা তো সেটা পারে না। তাদের জন্য কোনো না কোনো তরকারি লাগেই। সেজন্য এই তিস্তা বাজার মোড়ে তার বিক্রি হওয়াটা জরুরি।
মোস্তাফিজুর রহমানের মতো নিজেদের সারা দিনের জন্য বিক্রি করতে এখানে এসেছেন ফিরোজ কবির, ফাহিম, মৃদুল, সাজু, শুভ, উজ্জ্বল, রাসেল, মুন, হাবিবুর রহমান। তারাও এসেছেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রমিক।
কথা হয় ফাহিম নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে। ৫ সদস্যের সংসার তার। বড় ছেলে শিবরাম আলহাজ মো. হোসেন স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই তিস্তা বাজার মোড়ে নিজেকে বিক্রি করতে না পারলে হাতে টাকা আসবে না। আর টাকা না এলে খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ হয়ে যাবে পুরো পরিবারের। তাছাড়া আছে ছেলের পড়াশোনার খরচ। সে কারণে এখানে নিজেকে বিক্রি করতে পারাটাই জিতে যাওয়া।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com