শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন

সাদুল্লাপুরে রিকশার প্যাডেলে জীবনযুদ্ধ বৃদ্ধের

সাদুল্লাপুরে রিকশার প্যাডেলে জীবনযুদ্ধ বৃদ্ধের

সাদুল্লাপুর প্রতিনিধিঃ বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এক বৃদ্ধ মনছুর আলী। বয়স ৭৮ বছর ছুঁইছুঁই করছে। যে বয়সে অবসর সময় কাটানোর কথা, সেখানে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে অবিরাম ছুটে চলছেন রাস্তা-ঘাটে। ব্যাটারীবিহীন এ রিকশায় যাত্রী নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও তবুও জীবিকার তাগিদে ছুটছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তরে। পথচলা কঠিন হলেও পৃথিবীতে থেমে থাকার লড়াইয়ে থেমে নেই এই বৃদ্ধ।
সম্প্রতি গাইবান্ধা-মাদারগঞ্জ সড়কের সাদুল্লাপুর শহরে যাত্রী নিয়ে রিকশা চালাতে দেখা যায় বৃদ্ধ মনছুর আলীকে। তার বাড়ি সাদুলাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের শালাইপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত টাঙ্গারু শেখের ছেলে।
জানা যায়, অতিদরিদ্র ঘরে জন্ম মুনছুর আলীর। স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েসহ ৬ সদস্যের পরিবার তার। এই পরিবারের অন্ন-বস্ত্র যোগাতে তিন চাকার রিকশায় সহায় সম্বল। দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে হাতে হ্যান্ডেল আর পায়ে প্যাডেল মেরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। কয়েক বছর আগে তার রিকশা রেখে নামাজে গেলে চুরি হয়ে যায় রিকশাটি। ফলে থমকে যায় জীবনযুদ্ধ। এরই মধ্যে গাইবান্ধার এক চিকিৎসক কিনে দেন একটি রিকশা। তবে সেটি কোন ব্যাটারী চালিত নয়। তবুও জীবিকার তাগিদে পায়ে প্যাডেল মেরে যাত্রী বহনে অবিরত চালিয়ে আসছেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই উপার্জনের টাকা দিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলেটিও বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই তার। এখন স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের ভূমিতে বসবাস। বৃদ্ধ বয়সেও নেই কোন অবসর। সকাল হলেই রিকশা নিয়ে বের হতে হয় তাকে। যাত্রী নিয়ে ছুটেন নানা দিক। এর পাশাপাশি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে ভুলেনি কখনো। তাকে রিকশা নিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তায়। তবে যাত্রী উঠে কম। কারণ, বয়স্ক আর প্যাডেল চালিত গাড়ী। তাই যাত্রীরা উঠতে অনাগ্রহী। অনেক মিনতি করে যাত্রী তুলে নেন বৃদ্ধ চালক মনুছুর আলী। এভাবে দিন শেষে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনমতে চলছে জীবন-জীবিকা। যেনো নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা তার। শেষ বয়সেও মুনছুর আলী তপ্ত রোদ আর শীত-বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের আশায় রিকশা নিয়ে ছুটে চলা তার।
আব্দুস সামাদ নামের একজন শিক্ষক বলেন, এই বৃদ্ধ চাচাকে প্রায়ই রিকশা নিয়ে ঘুরতে দেখি। কিন্তু কোন যাত্রী তার রিকশায় উঠতে চায় না। প্যাডেল চালিত রিকশা ও বয়স্ক বলে যাত্রীরা নারাজ।
সাদুল্লাপুরের রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ,স, ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে মুনছুর চাচার সঙ্গে দেখা হয়। জীবিকার সন্ধানে বার্ধক্য বয়সেও তাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে। রিকশাটি ব্যাটারী চালিত হলে ভালো হতো। তাকে বিত্বশীল ব্যক্তি কিংবা সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোহিতা করা দরকার।
রিকশা চালক বৃদ্ধ মনছুর আলী জানান, একদম ভূমিহীন ব্যক্তি তিনি। বয়সও এখন বার্ধক্য। ঝুঁকিপুর্ণ ঘরে বসবাস। সীমিত আয়-রোজগারে স্ত্রীকে নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com