শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

সাদুল্লাপুরে মাদরাসা শিক্ষক এখন ফেরিওয়ালা

সাদুল্লাপুরে মাদরাসা শিক্ষক এখন ফেরিওয়ালা

Digital Camera

সাদুল্লাপুর প্রতিনিধিঃ মৌলভী মোঃ শাহীন মিয়া। চাকুরী নেয় একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায়। বাবা-মা’র মুখে হাসি ফুটাবেন, এমন স্বপ্নে চাকুরীতে যোগদান করেন তিনি। কিন্তু বিধিবাম! চাকুরী জীবনের ৭ বছর পার হলেও, এখনো তার কপালে জোটেনি সেই বেতন-ভাতা। ফলে জীবিকার তাগিদে তিনি এখন ফেরি করে বিক্রি করছেন কেক। এই কেক বিক্রি করেই সংসার চালাতে হচ্ছে তাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জামালপুর ইউনিয়নের নাগবাড়ী বাজারে দেখা হয় শাহীনের সঙ্গে। এসময় বাইসাইকেল আর ব্যাগে করে বেকারীর তৈরী কেক ফেরি করে বিক্রি করছিলেন বিভিন্ন দোকানে।
জানা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের বকু মিয়ার ছেলে মাওলানা মোঃ শাহীন মিয়া। গত ২০১৪ ইং সনে স্থানীয় পাতিল্যাকুড়া-চকদাড়িয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসায় সহকারী মৌলভী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পাঠদান দিয়ে শিক্ষার আলো ছাড়াচ্ছেন প্রাথমিক স্তরের শিশুদের মাঝে। এভাবে অন্যের জীবন আলোকিত করার চেষ্টা করে আসলেও, নিজের জীবনের আলো প্রায় নিভু নিভু অবস্থায় পড়েছে। কারণ, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে ওই মাদরাসায় চাকুরী করে আসলেও, আজও তার কপালে জোটেনি কাঙ্খিত বেতন-ভাতা। দীর্ঘ সময়ে বিনা বেতনে চাকুরীতে সংসার জীবনে নেমেছে অস্বচ্ছলতা। এরই মধ্যে এক বছর আগে বিয়েও করেন শাহীন মিয়া। এরই পর নববধূ ও মা-বাবাকে নিয়ে টানা পোড়েনে পড়তে হয় তাকে । যেন তার জীবেন নেমে আসছে অন্ধকার।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জীবন-জীবিকার তাগিদে শাহীন মিয়া শুরু করেন বেকারির তৈরী কেক এর ব্যবসা। ভোরের সূয্য উঠার আগে বাইসাইকেলের প্যাডেল চালিয়ে বাজার জাতের জন্য কেক আনতে যেতে হয় গাইবান্ধা শহরের এক বেকারিতে। এরপর বাড়িতে ফিরে সেইসব কেক ব্যাগে ভর্তি করে নিয়ে বেরুতে হয় বিভিন্ন হাট-বাজারে। বাইনাইকেল চালিয়ে দিনভর ছুটে চলেন অন্যের দোকানে দোকানে। এসব দোকানগুলোতে বিক্রি করেন প্যাকেট জাতের মুখরোচক কেক। এতে দৈনিক প্রায় ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় । এ দিয়েই কোনমতে চলে শাহীন মিয়ার সংসার।
নাগবাড়ী বাজারের ভ্যরাইটিজ দোকানদার এনামুল হক বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে শাহীন মাস্টারের কাছ থেকে পাইকারিতে কেক কিনে বিক্রি করছি। তবে প্রথমের দিকে তার কেক নিতে চাইনি। যখন শুনলাম তিনি একজন মাদরাসার শিক্ষক। তার বেতন-ভাতা না হওয়ায় কেকের ব্যবসা শুরু করছেন। এমনটা জেনে শাহীন মাস্টারের কাছেই নিয়মিত কেন ক্রয় করি। যাতে করে লাভবান হন তিনি।
এ পরিস্থিতির শিকার শাহীন মিয়া জানান, কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিছে পিতা-মাতা। তাদের এ কষ্ট ঘোচাতে ৭ বছর আগে ওই মাদরাসায় সহকারী মৌলভী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তি না হওয়ায় এখনো বেতন-ভাতাদির সুবিধা পায়নি। এমতাবস্থায় জীবিকার তাগিদে ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে বেকারির তৈরী কেক। এ দিয়ে দৈনন্দিন ২০০-২৫০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে কোনমতে চলছে শিক্ষক শাহীন মিয়ার সংসার।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com