বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন

সাদুল্লাপুরে বিলুপ্তির পথে কাউন চাষ নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে কাউন

সাদুল্লাপুরে বিলুপ্তির পথে কাউন চাষ নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে কাউন

স্টাফ রিপোর্টারঃ এক সময়ের জনপ্রিয় শষ্যদানার ফসল কাউন। সেই কাউন চাষ হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় কৃষিতে ধান পাট গম ভুট্রা ছাড়া জনপ্রিয় ছিল কাউনের বউখুদা ভাত। সেই কাউন এখন নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে। চিনতেই পারছে না তরুণ প্রজন্ম কাউন কি দেখতে কেমন। ধানের ফলন তেমন না হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়ত কৃষকরা। এ সংকট মেটাতে বিকল্প হিসাবে কাউনের কদর ছিল অনেক। ভাদ্র, আশ্বিন ও মরা কার্তিক মাসে গোলা শূন্য হয়ে পড়ত কৃষকের। তখন এসব পরিবারসহ নিম্ন আয়ের মানুষ ভাতের বিকল্প কাউনের ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করত। বর্তমান সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে কৃষির ব্যাপক উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সেচ ও যান্ত্রিকীকরণের হাত ধরে আসে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান। বাড়ে আলু, আম ও লিচুর এবং হাইইব্রীড সবজি চাষ । অন্যদিকে আশানুরূপ ফলন ও দাম না পাওয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কাউন,যব,গম । তবে এখন আর ওই সব ফসল চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ নেই। গ্রামীণ নারীরা ঢেঁকিতে কাউন ছেঁটে চাল তৈরি করত। পুষ্টিকরসহ রুটি, ফিরনি,পায়েস ক্ষীর, নাড়ু, মোয়া, খাজা এমন হরেক রকমের সু-স্বাদু খাবার ভোজনবিলাসী মানুষের কাছে সমাদৃত থাকলেও এখন আর সেই সব সু-স্বাদু খাবার নতুন প্রজন্ম তা ভুলতে বসেছে, কিন্তু আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণে এক ফসলি জমি তিন-চার ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। কাউন চাষে প্রতি বিঘা ফলন হতো ৪ থেকে ৫ মণ। ফলন ও দাম ছিল অনেক কম। ফলে এ ফসল চাষে আগ্রহ হারান কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, সাদুল্লাপুর উপজেলায় রসুলপুর দামোদোরপুর ও কামারপাড়া ইউনিয়নে দুই হেক্টর জমিতে কাউনের চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু ঐ সব ব্লকের উপ সহকারি কর্মকর্তারা জানান, তাদের ঐ সব ব্লকে কোন কাউনের আবাদ নেই। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে সরে জমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলায় বিশেষ করে চর এলাকায় কোন ইউনিয়নে কাউনের চাষাবাদ নেই। স্বল্প খরচ, সহজ চাষ পদ্ধতি ও পানি সাশ্রয়ী হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঠিক তদারকির অভাবে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই ফসলটি আজ বিলুপ্তির পথে। এমনকি উপজেলায় কাউন চাষের কোনও তথ্য নেই কৃষি কর্মকর্তার দপ্তরে। তাই কাউনের উন্নত জাত সরবরাহ করে স্থানীয় কৃষি অফিসের তদারকির মাধ্যমে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের এ ফসল বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার দাবি সচেতন মহলের। দামোদরপুরের ভাঙ্গামোড় গ্রামের তাজুল পুরানলক্ষীপুর গ্রামের মজিবর জানান,আগে এ এলাকায় ব্যাপক হারে কাউনের চাষ হতো। আমার বাপ-দাদারাও করত। এখন আর কেউ করে না। তবে কাউনে খরচ কম। সেই সঙ্গে লাভ বেশি। এ দিকে বাজারে চাহিদাও রয়েছে কাউনের। বীজেরও অনেকটা সংকট। তাছাড়া কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা যদি কৃষককে উদ্বুদ্ধ করলে কৃষকরাও আগ্রহী হবে। পাশাপাশি বাংলার হারানো ঐতিহ্যও ফিরে আসবে। উত্তর দামোদোরপুর গ্রামের কৃষক মমিন জানান, এক সময় এ অঞ্চলে মঙ্গা ছিল। ধানে ফলন কম হওয়ায় ভাতের অভাব ছিল। আর পেটের ক্ষুধা নিবারণে কাউনের ভাত ছিল ভরসা। এখন কৃষিতে এসেছে পরিবর্তন। এতে আপামর জনগোষ্ঠী দরিদ্রের চরম শিকড় থেকে বেরিয়ে এসে শান্তিময় জীবন যাপন করছেন। যে জিনিস হারিয়ে যায়,তার কদর বাড়ে। এমনটাই হচ্ছে কাউন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ফলে উচ্চ ফলনে হাইব্রীড জাতগুলোর দখলে কাউন চাষের তেমন ফলন ও দাম না পেয়ে কৃষকরা কাউন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com