শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ সারি সারি বস্তায় আদা গাছের সবুজের সমাহার। সেগুলো পরিচর্যায় ব্যস্ত রুবেল শেখ। সম্প্রতি সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের উত্তর ফরিদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা মিলল এমনই চিত্রের।
নিভৃত গ্রামাঞ্চলের যুবক রুবেল। কৃষি পরিবারেই তার জন্ম। স্বপ্ন দেখেন কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। এই স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে বাড়ির পরিত্যক্ত স্থানে বস্তা পদ্ধতিতে শুরু করেছেন আদা চাষ। দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। এখান থেকেই দিনবদলের স্বপ্ন বুনছেন রুবেল।
কথা বলে জানা যায়, ওই গ্রামের কৃষক আব্দুল গনি শেখের ছেলে রুবেল শেখ একজন এনজিও কর্মী। বসতবাড়ির উঠান ও ভেতরে অনেক জায়গা পরিত্যক্ত আছে তার। সেই চিন্তা থেকে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এ নিয়ে সবসময় ইউটিউব ও গুগল সার্চে ঘাটাঘাটি করতেন। এক পর্যায়ে বস্তা পদ্ধিতে আদা চাষের ব্যপারে মনস্থির করেন।
ধফধএ বিষয়ে রুবেল তার স্ত্রী জেবিন আক্তার ও ছোট বোন শারমিন খাতুনসহ বাবা-মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করেন। সর্বসম্মতিতে পরিকল্পনা নেওয়া হয় এই পদ্ধিতে আদা চাষের। এরইমধ্যে গত চৈত্র মাসে এক হাজার বস্তায় মাটি ভর্তি করে এর ভেতরে বারি-২ জাতের আদা বীজ রোপণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেল, নিজ বাড়ির ভেতর ঘরের বারান্দায় ও আঙ্গিনা এবং বাড়ির বাহিরের উঠানের ছায়াযুক্ত স্থানে সারিবদ্ধভাবে বস্তা বসিয়ে এই আদা চাষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেই আদায় দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। আর কিছুদিন পরই এ ফসল ঘরে তুলবেন এই উদ্যোক্তা।
বস্তা পদ্ধতি এই আদা চাষে তার খরচ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার টাকা। এ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার আদা বিক্রি করা যেতে পারে বলে জানা গেছে।
বাড়িতে শুধু আদা চাষই নয়, একই সঙ্গে দুগ্ধগাভী পালন, নেপিয়ার ঘাস, লাউ, পেঁপে, লেবুসহ মাছ চাষেও ঝুঁকে পড়েছে রুবেল শেখ। তার এমন কাজ দেখে স্থানীয় অনেকে একই পরিকল্পনা নিয়েছেন।
বস্তা পদ্ধতি আদা চাষ বিষয়ে উদ্যোক্তা রুবেল শেখ জানান, স্থানীয় বাজার থেকে সারের খালি বস্তা সংগ্রহ করেছেন। একইভাবে ট্রাকভর্তি বেলে দো-আঁশ মাটি কিনেছেন। প্রত্যকটি বস্তায় পরিমাণ মতো জৈব-রাসায়নিক-কম্পোস্ট সার ও দানাদার কীটনাশক ওইসব মাটির সঙ্গে মিশ্রিত করে বস্তাপ্রতি ২-৩টি করে আদা রোপণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাড়িতে আদা-মাছ-ঘাস চাষে আমার বাবা-স্ত্রী-বোন সবসময় সহযোগিতা ও উৎসাহ যোগাচ্ছেন। এই পদ্ধিতে আদা চাষে ফলন বেশি পেতে পারি। আশা করছি আমি লাভবান হবো। এ অঞ্চলে প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে পরিত্যক্ত জায়গায় রয়েছে। তারা যেন এইভাবে আদা চাষবাদ করেন, সে বিষয়ে সবাইকে উৎসাহিত করছি।
স্থানীয় শিক্ষক মোসলেম আলী বলেন, বস্তায় রুবেলের আদা চাষ দেখতে এসে খুব ভালো লাগলো। আমিও এইভাবে আদা চাষের চিন্তা মাথায় রাখলাম।
সাদুল্লাপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, সাধারণভাবে আদা চাষের চেয়ে বস্তা পদ্ধতি চাষ করা অনেকটাই লাভজনক। এ নিয়ে অন্যান্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষক রুবেলকে লাভবান করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।