বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন

শ্যালো মেশিন দিয়ে নদী খননঃ হুমকির মুখে ব্রীজ ও বসতবাড়ি

শ্যালো মেশিন দিয়ে নদী খননঃ হুমকির মুখে ব্রীজ ও বসতবাড়ি

সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নিয়মনীতির বালাই নেই, নেই সরকারি নির্দেশনার প্রয়োগ। নদী খননের নামে শ্যালো মেশিনে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে দায় সাড়া নদী পূনঃখনন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সুন্দরগঞ্জ ও রংপুরের মিঠাপুকুরের মধ্যবর্তী সিমানা দিয়ে বয়ে চলা ঘাঘট নদী এভাবেই খনন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দরপত্রে ড্রেজার ব্যবহারের কথা থাকলেও তার কোন ব্যবহার নেই খনন কাজে। ফলে নদীর উপর নির্মিত চরকাবাড়ি ব্রীজ, এলজিইডির সড়ক ও আশপাশের গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সুন্দরগঞ্জ ও রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মধ্যবর্তী সিমানা দিয়ে প্রবাহমান ঘাঘট নদীর চরকাবাড়ি ব্রীজের উজানে ও ভাটিতে ২ হাজার মিটার পূণঃখনন কাজ শুরু করেছে রংপুর পাউবো। প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মোঃ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স নামক চট্টগ্রামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দরপত্র অনুযায়ী ড্রেজার ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা না মেনেই শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে খনন করছে প্রতিষ্ঠানটি। নকশা অনুযায়ী নদীর দু’ধারে ১৫ মিটার পাড় নির্মাণ, ৩০ মিটার করে স্লোভ নির্মাণ ও ২০ মিটার নদীর তলদেশ খনন করা হবে। তবে প্রকল্পটিতে ড্রেজিং কাজের জন্য ড্রেজার মেশিন দিয়ে খনন কাজ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক হলেও তা করা হচ্ছে না। সম্পূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ইঞ্জিন চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে। যা মূলত ভূ-গর্ভস্থ অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এমনকি আধা কিলোমিটারের মধ্যে ৬টি অবৈধ শ্যালো মেশিন লাগিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে দায় সাড়া নদী খনন কাজ করছে পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। আর খনন করা পলিমাটি ও বালু গুলো ফেলা হচ্ছে নদীর কাছেই। বর্ষা মৌসুম আসলে এসব মাটি বৃষ্টির ঢলে আবারো নদী নেমে গিয়ে ভরাট হবে। এতে একদিকে যেমন সরকারের কোটি টাকা নদীর পানিতে ভেসে যাবে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আশেপাশের ফসলি জমি, ব্রীজ, রাস্তা-ঘাট ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম। নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করলে তা হবে অপরিকল্পিত নদী খনন। যা নদীর নাব্যতা ফেরার পরিবর্তে পানি প্রবাহ বাধাঁগ্রস্থ হবে। বিশেষ করে যে গভীরতা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ফলে চারপাশ থেকে বালুর স্তর ভেঙে এসে তলদেশ ভরাট হয়ে যাবে। এমনকি বন্যার সময় নদীর ¯্রােত বেঁেক গিয়ে অন্যদিকে ভাঙন সৃষ্টি করতে পারে বলেও ধারণা তাদের। বিপর্যয় রোধে প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ করে নদীর পূনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
নদী বাচাঁও দেশ বাচাঁও আন্দোলনের আহ্বায়ক সাদেকুল ইসলাম দুলাল বলেন, নদী পূনঃখনন কাজে সরকারি যে নির্দেশনা দেয়া আছে তা মানতে হবে। অন্যথায় শ্যালো মেশিন দিয়ে নদী ড্রেজিং কাজ করলে তা পরবর্তীতে ক্ষতির কারণ হবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তবিবুর রহমান ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হল নদী খনন করা তা ড্রেজার হোক বা শ্যালো মেশিন। ড্রেজার ব্যবহার না করে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করা নিয়ম বর্হিভুত কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘাঘট নদীতে ড্রেজার মেশিন প্রবেশ করার কোন উপায় না থাকায় শ্যালো মেশিন দিয়েই খনন কাজ করা হচ্ছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com