শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন

রংপুর চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ায় আখচাষীরা বিপাকে

রংপুর চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ায় আখচাষীরা বিপাকে

স্টাফ রিপোর্টারঃ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আখচাষীরা এখন চরম বিপাকে। অনেকে গুড় তৈরী করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও ইদানিং গুড়ের চাহিদা কম থাকায় সেদিক থেকে তারা অর্থনীতি ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না। ফলে এতদাঞ্চলের জনপ্রিয় ফসল আখ এবার কৃষকের মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হঠাৎ করে চিনিকলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বছর জুড়ে আবাদ করার পর একসাথে বিশাল অংকের টাকার যোগান দেয়া ফসল আখ এবার কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গাইবান্ধার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারিশিল্প কারখানা মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনায় চাষ করা প্রায় ৫ হাজার দুইশ’ একর জমিতে আখ দন্ডায়মান রেখে হঠাৎ করে চলতি বছরে এ চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ অন্য চিনিকলে এ সব আখ পাঠানোর ব্যবস্থা নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগন্য। আখ কাটার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এখন কৃষকরা না পারছেন জমির আখ অন্যত্র বিক্রি করতে, আবার না পারছেন জমিতে রাখতে। এ কারণে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ আখ জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। জমি থেকে আখ কেটে জমি মুক্ত করতে না পেরে ধান বা অন্য ফসল চাষাবাদের প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে চিনিকল কর্তপক্ষ তাদের দেয়া ঋণের টাকা আদায় করে নেয়ার জন্য সীমিত সংখ্যক ‘পুর্জি’ (চিনিকলে আখ সরবরাহের অনুমতিপত্র) দিলেও সে আখও সঠিকভাবে নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন চাষীরা। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে অবৈধ মাড়াইকলে গুড় তৈরি করে আখের অর্ধেক মূল্যও ঘরে তুলতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রংপুর চিনিকলের আওতাধীন আটটি সাব-জোন এলাকার ৪০টি ক্রয় কেন্দ্রের আওতায় পাঁচ হাজার দুইশ’ একর জমিতে উৎপাদিত ৫২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর মাড়াই শুরুর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই রংপুর চিনিকল সহ দেশের ৬টি চিনিকলে আখ মাড়াই স্থগিতের চিঠি আসে বিএসএফআইসি’র (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থা) সদর দপ্তর থেকে। চিনিকলের লোকসানের বোঝা কমানোর জন্য এ পদক্ষেপ নিলেও চিনিকল থেকে দেয়া ঋণের টাকায় উৎপাদিত আখ সময়মত ও সঠিকভাবে সংগ্রহের বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে আখচাষী ও শ্রমিকরা অভিযোগ করে আসছেন। এরপরেও কেবল মাত্র পরিবহন খাতেই কয়েক গুণ টাকা বেশি ব্যয় করে জয়পুরহাট চিনিকলে আখ প্রেরনের সিদ্ধান্তে অটল থাকে কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ দিন পরে আখ সংগ্রহ শুরু করে বর্তমানে প্রতিদিন সাতশ’ মেট্রিক টন আখ প্রেরণের কথা থাকলেও মাত্র দুই থেকে তিনশ’ মেট্রিক টন আখ প্রেরণ করা হচ্ছে জয়পুরহাট চিনিকলে। এভাবে চললে চাষীদের জমির সিংহভাগ আখই জমিতেই শুকিয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এ দিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি না থাকায় রংপুর চিনিকল জোন এলাকায় এবার ১২০টি অবৈধ আখ মাড়াইকল কম দামে আখ কিনে গুড় মাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল মিলস গেট এলাকাতেই ১০ থেকে ১৫টি মাড়াইকল গুড় মাড়াই করছে। এব্যাপারে রংপুর চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো: আমিনুল ইসলাম জানান, শ্রমিক ও পরিবহন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হয়ে গেছে। একটি জমির আখও পড়ে থাকবে না। বর্তমানে পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ির সাথে জয়পুরহাট চিনিকলের ১০টি গাড়ি এনে এখন থেকে প্রতিদিন সাতশ’ মেট্রিক টন আখ জয়পুরহাট চিনিকলে পাঠানো হবে। এতে দ্রুতই আখ সংগ্রহ ও পরিবহন শেষ হয়ে যাবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com