শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন

ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীতে নতুন করে পানি বৃদ্ধি: গাইবান্ধার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীতে নতুন করে পানি বৃদ্ধি: গাইবান্ধার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টারঃ উজান থেকে নেমে আসা পানি ও গত দুইদিনের লাগাতার প্রবল বৃষ্টিপাতে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি পুনঃরায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গত ২০ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৬ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৫ সে.মি এবং ঘাঘট নদীর পানি ৪ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ইতোপূর্বে বন্যা কবলিত যে সমস্ত এলাকা থেকে পানি সরে গিয়েছিল সে সমস্ত এলাকাসহ নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় মানুষের দূর্ভোগ আরও বেড়েছে।
এদিকে বন্যায় গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন বন্যার পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে রেলওয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ওই এলাকা পরিদর্শন শেষে জানিয়েছেন। কেননা ত্রিমোহিনী রেল স্টেশন থেকে বাদিয়াখালী রেলস্টেশন পর্যন্ত একাধিক পয়েন্টে রেললাইনের নিচের মাটি বন্যার পানিতে ধুয়ে গেছে এবং এ সমস্ত এলাকায় রেল লাইন ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, কমপক্ষে তিন সপ্তাহের আগে এই রুটে ট্রেন চলাচল চালু করা সম্ভব হবে না। এদিকে এক টানা আটদিন যাবত লালমনিরহাট-সান্তাহার সকল রুটে সরাসরি ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় রেল যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের কবলে পড়তে হচ্ছে।
গাইবান্ধা পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি আবারও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে বাঙ্গালি ও করতোয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পৌরসভাসহ কয়েকটি গ্রামে নতুন করে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই, চকমামরোজপুর, কাজীপাড়া, বাহারবন পশ্চিমপাড়া, সরকারপাড়ার কিছু অংশ এবং ডেভিড কোম্পানীপাড়ার পশ্চিম অংশে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। এখনও অনেক ঘরে পানি রয়েছে। তাই বাঁধসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত বানভাসি লোকজন এখনও ঘরে ফিরে যেতে পারছে না। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট। ফলে জনগণকে নানা দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এদিকে বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৪২৪টি গ্রাম ও ২টি পৌরসভার ৫ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৭০টি। তাদের বেশীর ভাগই নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এসে উঠছে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৯৭টি। এছাড়া ১৪ হাজার ২১ হেক্টর আউশ ধান, আমন বীজতলা, রোপিত আমন, পাট ও শাকসবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে এবার বন্যায় ১টি গরু, ৩ হাজার ৭২০টি হাঁস-মুরগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ১৫০ মে.টন চাল, ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৬ হাজার শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
কঞ্চিবাড়ী (সুন্দরগঞ্জ) থেকে মোঃ আব্দুল মতিন সরকার জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার চরাঞ্চলের বানভাসিদের ত্রাণের বরাদ্দ অপ্রতুল। বন্যা শিবিরগুলোতে এখন ত্রাণ, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের চাহিদা দেখা দিয়েছে। গত শুক্রবার রাত হতে পানি কমতে শুরু করলেও গত দুইদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে আবারও বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে বানভাসিদের মাঝে দেখা দিয়ে নানাবিধ রোগব্যধি, ত্রাণ ও গো-খাদ্য সংকট। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সোলেমান আলী নিজে ওষুধ বিতরণ করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় মেডিকেল টিমের সংখ্যা অনেক কম। সে কারণে বানভাসিরা ওষুধ পেতে বিলম্ব হচ্ছে। পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম না থাকার কারণে এখনো অনেক দূর্গম চরাঞ্চলে বানভাসিদের কাছে ওষুধ পৌঁছেনি। বিশেষ করে পানি বিশুদ্ধ করন ট্যাবলেট ও গো-খাদ্যের তীব সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা পরিমাণে কম। চরবাসীর দাবি পানি বসতবাড়ি থেকে নেমে গেলেও সহজে বাড়িতে উঠা যাবে না। কারণ ঘরবাড়ির যে অবস্থা না সেরে বাড়িতে থাকা যাবে না। মানুষের চেয়ে গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বানভাসিরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সোলেমান আলী জানান, পানিবন্দি পরিবারদের মাঝে শুকনো খাবার, ত্রাণ সামগ্রী, ওষুধ ও গো-খাদ্য বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আরও ত্রাণ সামগ্রীর জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রাই তা বিতরণ করা হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com