বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন

ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিতঃ গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতিঃ ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী

ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিতঃ গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতিঃ ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন পুনরায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী।
ইতোপূর্বে যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে গিয়েছিল ওইসব এলাকা আবার নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় পানিবন্দী পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। শুকনো খাবার ও জ্বালানির অভাবে খাদ্য সংকটে পড়েছে বন্যার্ত মানুষ। অনেকে ইতোমধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯৯ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৭১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ উপজেলার বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য নতুন করে ১শ’ মে. টন চাল, ৪ লাখ টাকা, ১ হাজার ৮শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, বন্যার পানি আরও দুদিন বাড়বে। এতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে জরুরী প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হচ্ছে। বাঁধের অবস্থা এখনও ভালো আছে।
সাঘাটা প্রতিনিধিঃ সাঘাটা উপজেলা ভাসছে বানের পানিতে। পানিবন্দি হয়ে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। টানাবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা, তলিয়ে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, করতোয়াসহ সবক’টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত আছে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৫২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ৫২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় খাদ্য, পানি ও জ্বালানি সঙ্কটে পড়েছে পানিবন্দী মানুষ।
বানের পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল। এসব এলাকার মানুষজন প্রয়োজনীয় খাদ্য, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও গবাদিপশু নিয়ে বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রথম দফায় বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় দফা বন্যায় উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ফের পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ বন্যা আতঙ্কে আছে। বন্যায় পানি বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর ঘেঁষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি পানির তোড়ে চরম হুমকির মুখে পড়বে। পানি বৃদ্ধির ফলে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, জুমারবাড়ী, ভরতখালী, ঘুড়িদহ ও সাঘাটা ইউনিয়নের পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, দক্ষিণ সাথালিয়া, উত্তর সাথালিয়া, বাঁশহাটা, নলছিয়াসহ ১৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা রোস্তম আলী জানান ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল গ্রাম, চিনিরপটল দাখিল সাদ্রাসা, ১টি মসজিদসহ অনেক ঘরবাড়ী যমুনা নদীর পানির তীব্র স্রোতে যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, বন্যার স্থায়ীত্ব ও ভয়াবহতা উপলব্ধি করে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্বক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি রক্ষায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার ও স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়াও সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর, সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াবদা বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম ইদ্রিস আলী বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী মজুত আছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com