শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনা প্রভাবে নান্দনিক ডিজাইন আর বাহারি রঙের শাড়ি, থ্রি-পিস ও সালোয়ার কামিজসহ হাতের তৈরি পোশাক নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাদুল্লাপুর উপজেলার এমব্রয়ডারি পল্লীর দুই শতাধিক নারী কারিগর। তারা বলছেন, ঈদ উৎসবে চাহিদা থাকায় নিজস্ব পুঁজির সঙ্গে ঋণ করে পোশাক তৈরিতে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু ঈদ এগিয়ে আসলেও পাইকারি ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের খুব একটা দেখা মিলছে না। ফলে লোকসান আর পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন তারা।
সাদুল্লাপুৃর উপজেলা শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে জামুডাঙ্গায় (মন্ডলপাড়া) গড়ে উঠেছে অ্যামব্রয়ডারি পল্লি। সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের দুই শতাধিক নারী কখনও বাড়িতে আবার কখনও উঠানে বসে শাড়ি, থ্রি-পিস ও সালোয়ার কামিজসহ বিভিন্ন পোশাকে সুই আর রঙিন সুতায় বাহারি নকশার কাজ করছেন। প্রত্যেকের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একেকটি পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নান্দনিক সব কাজ।
কাজের ফাঁকে কথা হয় নারী কারিগরদের সঙ্গে। তারা জানান, কিছুদিন আগেও তাদের সংসারে অভাব ছিল। স্বামীর আয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু প্রশিক্ষণ নিয়ে কাপড়ের কাজ করে বাড়তি উপার্জন হয় তাদের। প্রতিটি শাড়ি ও জামায় কাজ করে মজুরি হিসেব মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করে ভালোই চলছিল। এ কাজ করে আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখলেও করোনার প্রভাবে আগের মতো কাজ করতে পারছেন না। ফলে চোখে অন্ধকার দেখছেন এসব নারী।
অ্যামব্রয়ডারি পল্লীর নারী উদ্যোক্তা লাভলী বেগম জানান, করোনার প্রভাবে এবার বৈশাখেও পোশাক বিক্রি হয়নি। এখন ঈদের মার্কেটেও তেমন বেচাকেনা জমেনি। চাহিদা আর লাভের আশায় ব্যাংক ঋণ এবং নিজের সব অর্থ বিনিয়োগ করে পোশাক তৈরি করেন তারা। কিন্তু পোশাক বিক্রির জন্য পাইকার ও ব্যবসায়ীদের দেখা মিলছে না। এতে তৈরি পোশাক মজুত থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পুঁজি হারিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের পথে বসতে হবে। সংকট মোকাবিলা এবং এই পরিস্থিতিতে নারী উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে সরকারের সহায়তার দাবিও জানান তিনি।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ সাইফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ‘গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লী দারিদ্য দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) বাস্তবায়নে অ্যামব্রয়ডারি পল্লি গড়ে তোলা হয়। গ্রামীণ জনপদের অসহায়-কর্মহীন নারীদের স্বাবলম্বী করতে পাঁচটি সমিতির মাধ্যমে দুই শতাধিক নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণসহ ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের পর নারীদের সুই-সুতার বাহারি নকশার পোশাক তৈরি করে উপার্জিত অর্থে ভালো চলছিল সংসার। প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে অ্যামব্রয়ডারি পল্লির অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতির আশষ্কা করা হচ্ছে।’ পরিস্থিতি উত্তরণে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা ও নারী কর্মীদের পাশে থাকাসহ সহায়তায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সাদুল্লাপুর ইউসিসিএ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংকটের এই সময়ে নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা অসম্ভব। তাই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠাসহ নারী কারিগরদের প্রাণোদনা আর সহজ শর্তে ঋণ সহায়তার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।