শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

বালু উত্তোলনের মহোৎসব ব্রহ্মপুত্রে ভাঙনের আশঙ্কা

বালু উত্তোলনের মহোৎসব ব্রহ্মপুত্রে ভাঙনের আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টারঃ ফুলছড়ি উপজেলায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালাসীঘাট এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। প্রতিদিন ৪০-৫০টি কাঁকড়া (ট্রাক্টর) ও ট্রাক দিয়ে নদী থেকে চলছে বালু পরিবহনের কাজ। এতে করে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে ভাঙন দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে, প্রশাসনের লোকজন বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদী থেকে বালু উত্তোলন এবং সেই বালু বিক্রির মাধ্যমে একদল মানুষ কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। অন্যদিকে সরকারের কয়েক শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ছে। ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করায় নদের গতি পথও পরিবর্তিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুটিকয়েক লোকের স্বার্থের কারণে এভাবে সর্বনাশ মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষতি রোধ করতে হবে এবং অবিলম্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন কি না, সেটাও তদন্ত করে বের করতে হবে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, কঞ্চিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে তার ভাই লিটন মিয়া ও মিলন মিয়ার একটি চক্র বালাসী ঘাটের অদূরে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু তুলছেন। নদী থেকে বালু বা মাটি বিক্রির জন্য তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেননি। ফলে বালাসীঘাটে চলমান ফেরিঘাট টার্নিমালসহ প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া প্রতিদিন কাঁকড়া (ট্রাক্টর) ও ট্রাকে করে অবৈধভাবে বালু পরিবহনের কারণে রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা দিন-রাতে ৪০-৫০টি কাঁকড়া ও বালুবাহী গাড়ি দিয়ে নদী থেকে বালু পরিবহন করেন। একটি কাঁকড়া প্রতিদিন ৭/৮ বার বালু পরিবহন করে। ২০০ টাকা হিসাবে একটি কাঁকড়া প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার বালু পরিবহন করে। ৫০০ টাকা হিসাবে প্রতিদিন একটি ট্রাকে ৫/৬ হাজার টাকার বালু পরিবহন করা হয়। সে হিসাবে বালাসী ঘাটের একটি স্থান থেকে প্রতিদিন বালু বিক্রি হয় লাখ টাকার। সে হিসাবে বছরে শুধমাত্র বালাসীঘাট থেকে দুই কোটি টাকার উপরে বালু বিক্রি করেছে চক্রটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জমির মালিক বলেন, কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না এলাকার বালু ও মাটি উত্তোলন। এ বালু দিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ গভীর করে মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই বর্ষ মৌসুমে তার খেসারত দিতে হয় নদী পাড়ের জমির মালিকদের। ক্ষতি হয় ফসলি জমির, অনেক গাছপালা ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়।
অভিযুক্ত বালু ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন, আমার মতো অনেকেই বালু উত্তোলন করছেন। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া আমাদের জমিতে চর জেগে উঠেছে, আর সেখান থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছি। সবাইকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করছি।
ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, বালু ব্যবসার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আমি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত আছে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com