শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন

বল্লমঝাড়ে আঃলীগ নেতার বাসা থেকে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধারঃ মামলার অগ্রগতি নেই তদন্তে শম্বুকগতি

বল্লমঝাড়ে আঃলীগ নেতার বাসা থেকে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধারঃ মামলার অগ্রগতি নেই তদন্তে শম্বুকগতি

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগ নেতার বাসা থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর (৪৫) লাশ উদ্ধারের ঘটনার সাতমাস ২৬ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্ত কাজ চলছে শম্বুক গতিতে। তিন দফায় আইও (তদন্তকারি কর্মকর্তা) বদলিয়েও তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি প্রায় আটমাসেও।
আইনজীবিদের অভিযোগ, পুলিশ অভিযোগপত্র দিতে গাফিলতি করছেন। তারা বলছেন, লাশের ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট এসেছে। তারপরও অজ্ঞাত কারণে অভিযোগপত্র দিতে বিলম্ব করা হচ্ছে। ফলে বিচার কাজ শুরু হচ্ছে না। জানতে চাইলে জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি আহসানুল করিম বলেন, অভিযোগপত্র দিতে বিলম্ব করলে সাক্ষীরা ঘটনা ভুলে যাবে। স্বাক্ষী মারাও যেতে পারে। আলামত নষ্ট হবে। যথাসময়ে স্বাক্ষীগ্রহন না হলে ন্যায় বিচার বিঘিœত হবে। বিলম্ব হবে বিচার কাজও।
মামলার বিবরণে বলা হয়, চলতি বছরের ১০ এপ্রিল। ওইদিন সকালে আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানার (৪২) বাসা থেকে হাসানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গাইবান্ধা শহরের নারায়নপুর এলাকায় মাসুদের বাসা। তিনি গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক। ঘটনার পর দল থেকে তাঁকে বহিস্কার করা হয়। মাসুদ রানা একজন দাদন ব্যবসায়ী। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে দাদন ব্যবসা করতেন। প্রায় দুইবছর আগে রানার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেন শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী। এই টাকা সুদাসলে ১৯ লাখে দাঁড়ায়। সুদের টাকা দিতে না পারায় গত ৬ মার্চ লালমনিরহাট থেকে হাসানকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে আসেন মাসুদ রানা। তিনি হাসানকে নিজ বাসায় একমাসের বেশি আটকে রেখেছিলেন।
এনিয়ে নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম সদর থানায় মাসুদ রানাসহ তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপর দুইজন হচ্ছেন শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী রুমেল হক ও খলিলুর রহমান।
প্রথমে মামলার তদন্ত করেন গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) সেরাজুল ইসলাম। পরে গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি, বর্তমানে সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক মানষ রঞ্জন দাস দায়িত্ব পান। সর্বশেষ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব পান গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের ওসি মোঃ তৌহিদুজ্জামান। মানষ রঞ্জন দাস বলেন, তিনি কিছুদিন এই মামলার তদন্ত করেন। আশপাশের লোকজনের স্বাক্ষী নেন। তারপর বদলিজনিত কারণে তদন্তভার হস্তান্তর করেন।
এদিকে ঘটনার বিচারের দাবিতে ব্যবসায়ী ’হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চ’ গড়ে উঠে। বিচারের দাবিতে দুই মাসব্যাপী আন্দোলন চলে। আন্দোলনের মুখে সদর থানার তৎকালীন ওসি মাহফুজার রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবর রহমান এবং উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ঘটনার দিনই মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন।
প্রতিবাদ মঞ্চের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির বলেন, মামলাটি চাঞ্চল্যকর হলেও কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তিন দফায় আইও বদলিয়েও তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। তদন্ত কাজ চলছে শম্বুক গতিতে। প্রায় আটমাসেও মামলার অভিযোগপত্র দেয়নি পুলিশ। ফলে মামলার বাদীসহ গাইবান্ধার সচেতন সমাজ হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ওদিকে বিলম্বিত পুলিশ রিপোর্ট ন্যায় বিচারের পরিপন্থী বলে জানান জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ সিরাজুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি জেলা শহরের ঘটনা। ঘটনা সবার কাছে পরিস্কার। তারপরও পুলিশ অভিযোগপত্র দিতে গাফিলতি করছেন। মামলার বাদী বিথী বেগম বলেন, মামলার অগ্রগতি না থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এসব বিষয়ে মামলার বর্তমান তদন্তকারি কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান বলেন, তিনি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেয়েছেন। ভিসেরা রিপোর্ট পাননি। ভিসেরা রিপোর্ট পেলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন। এ ছাড়া এনিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষেরও একটা বিষয় আছে। তবে তদন্তের অন্যান্য কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে।
ভিসেরা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, সাধারণত দুই-তিনমাসের মধ্যে ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া যায়। তারপর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মতামতসহ তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট পাঠান। হাসান আলীর ভিসেরা এসেছে কিনা সেবিষয়ে তিনি কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান। একই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর থানার এক কর্মকর্তা জানান, অনেক আগেই ভিসেরা রিপোর্ট এসেছে। তদন্তকারি কর্মকর্তা ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার কথা বলছেন না।
তবে গড়িমশির অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানান গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। এ ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তু রিপোর্ট এবং আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। যাতে ঘটনাটি আদালতে যথাযথভাবে প্রমাণিত হয়। প্রকৃত অপরাধীরা বিচার পায়।
এদিকে একই ঘটনায় হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। গত ৭ নভেম্বর গাইবান্ধা সদর আমলী আদালতে এই মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় মাসুদ রানা ও তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। বাদী পক্ষের আইনজীবি মোঃ নওসাদুজ্জামান বলেন, একই ঘটনায় সদর থানায় করা মামলার প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে এই মামলার কার্যক্রম শুরু হবে। তাই আদালত মামলাটি মুলতবি (স্টে করা) করেন।
একই ঘটনায় আদালতে পৃথক মামলা দায়ের প্রসঙ্গে নওসাদুজ্জামান বলেন, পুলিশ মামলাটি ভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাবার জন্য অভিযোগপত্র দিতে বিলম্ব করছে। থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশের ভুমিকা উল্লেখ আছে। তবে তাদেরকে আসামি করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমলযোগ্য অপরাধ সংগঠিত হবার পরও পুলিশ অপহৃত হাসানকে অপহরণকারি মাসুদ রানার জিম্মায় দেয়। এখানে নিঃসন্দেহে পুলিশের ভুমিকা ছিল। তাই মাসুদ রানার সঙ্গে পুলিশকে আসামি হিসেবে অন্তভুক্ত করে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে প্রতিবাদ মঞ্চের সমম্বয়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় পুলিশও জড়িত। তাই তাদেরকে জড়িয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। নাহলে প্রয়োজনে তারা আবার আন্দোলনে নামবেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com