বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন

তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে বেসামাল হয়ে পড়েছে সুন্দরগঞ্জের মানুষ

তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে বেসামাল হয়ে পড়েছে সুন্দরগঞ্জের মানুষ

সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ মেয়াদি বন্যার ধকল কাটতে না কাটতে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বরণকালের ভাঙন অব্যাহত থাকায় হরিপুর ইউনিয়নের কাশিম বাজার পাঁকা রাস্তা, বেশ কিছু সংখ্যক দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়ি আবাদি জমিসহ ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে । গত এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষন এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি এবং ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসত বাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। যে হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে করে ফের বন্যার আশঙ্কা করছে চরবাসি। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। ভাঙনে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের, কাশিম বাজার, চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, কাশিম বাজার, শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পুটিমারী, লালচামার গ্রামে হাজারও একর ফসলি জমি ও ছয় শতাধিক বসত বাড়ি নদীগভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি এবং তিস্তার অব্যাহত ভাঙনের মুখে পরে বেসামাল হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের মানুষজন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পরেছে। বিশেষ করে কাপাসিয়া, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষুসি তিস্তানদীর গতিপথ এখন পরিবর্তন হয়েছে। পলি জমে তিস্তার মুলনদী একাধিক শাখা নদীতে রুপ নিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীতে তীব্র স্রােত দেখা দিয়েছে। স্্েরাতের কারনে ভাঙনের ফলে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারহ ও বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে নদী।
কথা হয় হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রঞ্জুর সাথে। তিনি বলেন গত এক সপ্তাহের ব্যাবধানে তার বাড়ির সামন দিয়ে কাশিমবাজার-উলিপুর পাঁকা সড়টি প্রায় এক কিলোমিটার তিস্তা গিলে খেয়েছে। এছাড়া তার বসতবাড়ি, দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তিনি বলেন তিস্তার ভাঙনে চরাঞ্চলবাসি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ সময় তীব্র আকারে নদী ভাঙার কথা নয়। অথচ দীর্ঘদিন থেকে দফায় দফায় নদী ভাঙন চলছে। যার কারনে হরিপুর ইউনিয়নের প্রায় হাজারও বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। চরের মানুষ তরিতরকারির আবাদ করে ৬ মাস সংসার চালায়। কিন্তু নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জানান- হে হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে করে ফের বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে তিনশত পরিবার ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে আড়াইশত পরিবার নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে পাঁচশতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া পরিবার গুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতার জীবন জাপন করছে।
শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান গত ২০ দিনের ব্যবধানে ইউনিয়নে লালচামার, পুটিমারি গ্রামের তিনশত পরিবার নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এছাড়া উঠতি ফসলসহ তিনশত বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী লুতফুল হাসান জানান, ভারি বর্ষন অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত পরিবারের তালিকা নিরুপন করে জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধানে হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। অনেক পরিবারকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং আশ্রয়ন কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোডের নিবার্হী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান নদীভাঙন রোধ একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। তবে নদী সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর জানান নদী ভাঙন রোধে হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com