শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ন

ফুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সাদুল্লাপুরের ফুলচাষীরা

ফুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সাদুল্লাপুরের ফুলচাষীরা

স্টাফ রিপোর্টারঃ পহেলা ফাল্পুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের ফুলচাষীদের ঘরে ঘরে এখন রাজ্যের ব্যস্ততা। এক দল ক্ষেত থেকে ফুল তুলছে, আরেক দল আঁটি বাঁধছে। বাড়িগুলোতে মেয়ে-বউরা মালা গাঁথায় ব্যস্ত। তবে এ ব্যস্ততায় ক্লান্তি নেই কারোরই। করোনাভাইরাস মহামারিতে লোকসান গুনে উপার্জন হারানো পরিবারগুলো নতুন বছরে বুনছে নতুন স্বপ্ন।
জারবেরা, গাঁদা, ডালিয়া, গ্লান্ডিওলাস, গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ রঙ-বেরঙের নানান ফুলের সমারোহ এখন সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে ।
এ বছর প্রায় সাদুল্লাপুর উপজেলার ৫ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ করা হয়েছে । এর মধ্যে জারবেরা, ডালিয়া, গ্ল্যান্ডিওলার, ক্যালেনডোলা, গাঁদা, গোলাপ ও রজনীগন্ধা অন্যতম।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়ন ফুল চাষের জন্য অন্যতম এবং এই এলাকার ফুল গাইবান্ধাসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার ফুলের চাহিদা পূরণ করেছে। এ উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২ শতাধিক কৃষক ফুল ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। বাগানে শ্রমিকের কাজ করা, মালা গাঁথা, ফুল পরিবহনসহ বিভিন্নভাবে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ এখন ফুল চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। এদিকে গত বছর করোনাভাইরাস মহামারিতে লোকসান গুনতে হলেও এ বছর লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশাবাদী কৃষকেরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বেলি, গ্ল্যাডিওলাস জারবেরা, গাঁদা গোলাপসহ নানান ফুলের সমারোহ। একই জমিতে ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করা হয়েছে।
ফুলের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠায় এসব এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। এ নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে উপভোগ এবং ক্যামেরা বন্দি করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক জন ছুটে আসছে এখানে। ফলে গড়ে উঠছে নতুন নতুন ব্যবসা। নতুন নতুন আয়ের উৎস খুঁজে পাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।
ফুল চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে ফুল চাষের পরিকল্পনা হয়ে থাকে। বছরের অক্টোবর শেষ দিক থেকে ফেব্রুয়ারির পর্যন্ত এ তিন থেকে চার মাস ফুল চাষিদের জন্য অন্যতম। শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল চাষিদের আয় হয় কোটি কোটি টাকা।
ইদিলপুরের ফুলচাষী মকবুল হোসেন জানান হোসেন জানান, করোনার কারণে গত বছর বিক্রি বাট্টা কমছিল। অনেক ফুল নষ্ট হয়েছে। ফলে অনেকেই এ বছর ফুল চাষে যুক্ত হয়নি। অনেকেই জমি বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে ফুল চাষের আবাদি জমির সংখ্যা কমেছে। আমি নিজেও এ বছর ফুল চাষ করেছি কম।
এছাড়া বর্ষার পানিও অনেকটা দেরিতে নেমেছে, শীতের কুয়াশাও ছিল। তবে এ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়েও ফুল উৎপাদন ভালো হয়েছে। আশা করছি গত বছরের লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে পারবো।
তার দাবি, সরকারিভাবে যথাযথ সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ পেলে ফুলের উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব হত। কারণ করোনাভাইরাস মহামারিতে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ ফুল চাষিরা কোনো সহযোগিতা পাইনি। যথাযথ সহযোগিতা বাজারজাতকরণ, স্বল্পসুদে ঋণের সুবিধা পেয়ে এসব সমস্যার সমাধান করলে ফুলের চাষ আরো বাড়বে, আগ্রহী হবে মানুষ। অনেকেই বাড়ির আঙিনায়, ছাদে ফুল চাষ করে আয় করতে পারছে।
এদিকে ফুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় করছে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা জয়তুন্নেছা। তিনি বলেন, এ সময় একজনের আয়ে কি সংসার চলে। আমার ছেলে অন্যর জমিতে কাজ করে রোজগার করছে আর ছেলে মেয়ের পড়াশুনা, তাছাড়া জিনিসপত্রের দাম যে বাড়ছে সেখানে ওই কয়টা রোজগার কিচ্ছু হয় না। তাই এ পথ। সকাল-বিকাল ফুল কুড়াই তারপর মালা গাঁথি। প্রতিদিন তিনশ থেকে চারশ টাকার ফুলের লহর বানাতে পারি।
সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান জানান এবছর ৫ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে গত বছরের যে লোকসান তা কাটিয়ে উঠতে পারবে কৃষকরা। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের মত এ ফুল উৎপাদনের যথাযথ নজর দিতে পারলে ফুলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। নতুন নতুন জাতের ফুল উৎপাদনও সম্ভব। এখন অধিকাংশই জমিতে বছরের তিন মাস ফুল চাষ হয় ।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com