মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন
ধাপেরহাট (সাদুল্লাপুর) প্রতিনিধিঃ আলুর বাজারে ধস,আলু নিয়ে বিপাকে চাষী ও অলু ব্যবসায়ীরা। কোটি কোটি টাকা লোকসানের আশংকা। হিমাগারে এখনো অ-বিক্রিত অবস্থায় ব্যাপক আলু মজুদ। ক্রেতা নেই। অধিক লাভের আশায় আলু চাষী ও ব্যবসায়ীগন হিমাগারে আলু মজুদ করেছেন, তারা এখন আলুর বস্তা উত্তোলনের ইচ্ছা টুকুও হারিয়ে ফেলেছেন। কারন হিসাবে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও কৃষক জানান, দেশের দক্ষিন অঞ্চলে এবারের বড় ধরনের বন্যা না হওায় আলু তেমন বিক্রি হচ্ছেনা। ট্রাক ভর্তি আলু আর দক্ষিন অঞ্চলে যাচ্ছেনা। অন্যান্য কাঁচা তরকারী বাজারে ব্যাপক এবং দাম কম হওয়ার আলুর কদর অনেক টাই কমে গেছে।
করোনা কালীন সময়ে গত বছর আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজার দর নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খায় সরকার। তবুও কিছুতেই আলুর উর্ধগামী বাজার নিয়ন্ত্রনে না আসেনি। এ কারনে ব্যাপক লাভবান হয়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা, এরই ধারাবাহিকতায় অধিক লাভের আশায় গতবছর অন্যান্য জেলার ন্যায় সাদুল্লাপুর উপজেলায় ব্যাপক আলু চাষে ঝুকে পড়েন আলু চাষিরা ফলনও হয়েছে বাম্পার। অল্প দিনেই হিমাগার গুলি আলুতে পরিপূর্ণ হয়। অনেক চাষি হিমাগারে আলু না রাখতে না পেয়ে বাড়িতেই সংরক্ষন করেছেন। বৃহত্তর রংপুর বিভাগে প্রায় ১৫০টি আলুর হিমাগার রয়েছে। সবগুলোতেই প্রায় একই অবস্থা। আলু প্রচুর মজুদ রয়েছে,ক্রেতা নেই।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার একমাত্র হিমাগার ধাপেরহাট আরভি কোল্ড ষ্টোরেজে সরেজমিনে গিয়ে জানাযায় চলতি বছর এ ষ্টোরে ৬০ কেজি ওজনের ১ লাখ ২৫ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষনের জন্য মজুদ করেন ব্যবসায়ী ও কৃষককুল। ব্যবসায়ীরা সংরক্ষনের জন্য ১২টাকা কেজি দরে আলু কিনেছেন। ৬০ কেজি ওজনের ১টি বস্তায় ৭২০ টাকার আলু, ষ্টোর ভাড়া ২২০ টাকা, খালি বস্তার মুল্য ৮০ টাকা ১বস্তা আলু রাখতে খরচ হয়েছে ৭২০ + ২২০+৮০ = ১০২০ টাকা। আর বর্তমান বাজারে ১ বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫৫০ হতে ৬০০ টাকায়। যা খরচের অর্ধেক প্রায়।
ধাপেরহাট আরভি কোল্ড ষ্টোরেজের: ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম জানায়, গত বছর এসময়ে সেপ্টেম্বর/২০ মাসে স্টোর থেকে প্রায় মজুদের অর্ধেক আলু ডেলিভ্যারি দিয়েছি। কিন্তু এ বছর আমরা মোট মজুদের ৪ ভাগের এক ভাগ আলুও ডেলিভারী দিতে পারি নাই। বাজারে মুল্য না থাকায় ব্যবসায়ী এবং কৃষকেরা তাদের মজুদ রাখা আলুর বস্তা বের করছেননা। অনেক ব্যবসায়ী বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা করে লোন গ্রহন করেছেন। যাহা সুদে আসলে ৩১৭ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে স্টোর থেকে আলু বের করতে হবে। কিন্ত, বিধিবাম বর্তমান বাজার মুল্য দরে আলু বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের আলুর মুল্যই আসছেনা। তার উপর ঋণের বোঝা। গত বছর এ সময় আলুর বাজার চড়া হওায় আলু মনিটরিং কমিটি গঠন করে সরকার নির্ধারিত মুল্য ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবারে ১০ টাকা কেজিও বিক্রি হচ্ছেনা। আলু ব্যবসায়ী আনারুল, হুমায়ুন, ময়নুল, নন্দন সাহা জানায় এ বছর আমাদের ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। আলু বিক্রি করে লাভ তো দুরের কথা মুলধনও হারাতে হচ্ছে আমাদের। ১৫/২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে, মুলধন ফেরৎ পেতাম। কিন্তু হচ্ছেনা বাজারে আলুর দাম নেই, দক্ষিন অঞ্চলে ক্রেতা কম, তাই আলুর ট্রাক পাঠাতে পারছিনা। অবিক্রিত অবস্থায় হাজার হাজার বস্তা আলু নিয়ে আমরা মহা বিপাকে পরেছি। তার উপর এবার আলুর বাজার ধস হওয়ায় অনেক চাষিই আসন্ন আলু মৌসুমে জমিতে আলু রোপণ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সে কারনে বীজ আলুও তেমন বিক্রি হচ্ছেনা। মোটা অংকের কোটি কোটি টাকার (ক্ষতি) লোকসান পুষিয়ে দিতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত আলূ চাষী ও ব্যবসায়ীরা।