ধাপেরহাট (সাদুল্লাপুর) প্রতিনিধিঃ নারী শ্রমিকেরা অনেক পরিশ্রমী। কম মজুরিতে পাওয়ার কারণে সাদুল্লাপুরে কদর বাড়ছে নারী শ্রমিকদের। তারা মাঠে কাজ করে দৈনিক দেড় থেকে দু’শ টাকায়। ইরি ধানের জমির আগাছা পরিস্কার, ধান কাটাই, মারাই, আলু কচু, গম, ভুট্টার জমিতে কাজ করছেন নারী শ্রমিকেরা। সাদুল্লাপুর উপজেলার খামারপাড়া গ্রামে গেলে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এক সময় ঘর-সংসার ও ছেলে মেয়ে সামলানো ছিল যাদের একমাত্র কাজ। উপার্জনের বিষয়টি দেখতেন বাড়ির পুরুষ কর্তারা। পুরুষের একক আয়ে গ্রামীণ পরিবারের অভাব, অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। এর সঙ্গে যুক্ত হয় নানা সামাজিক দুর্যোগ। ফলে যুগের সাথে তাল মিলাতে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়ে ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে তাদের বেড়িয়ে আসতে হয় ফসলের মাঠে। পরিচয় দাঁড়ায় নারী কৃষি শ্রমিক হিসেবে। সাদুল্লাপুর উপজেলায় এখন এক পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে নারী শ্রমিকদের মাঠে কাজ করা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নারী শ্রমিকরা অনেক পরিশ্রমী এবং কম মজুরিতে খুব সহজেই তাদের পাওয়া যায়। এ কারণে দিন দিন কদর বাড়ছে নারী শ্রমিকদের। কিছুদিন আগেও অত্র এলাকায় বিশেষ করে পীরগঞ্জের চতরা এলাকায় সাওতাল সম্প্রদায়ের নারীরা এ এলাকায় এসে মাঠে কাজ করত। তাদের ধান রোপনসহ বিভিন্ন কাজ দেখার জন্য আগ্রহের সহিত লোক জমায়েত হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে যুগের সাথে তাল মিলাতে ঘরের চৌকাঠ পেড়িয়ে সাদুল্লাপুরের মুসলিম নারীরাও মাঠে কাজ শুরু করেছে।
উপজেলার হাসানপাড়া, খামারপাড়া, তিলকপাড়া, সদরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে অনেকেই স্বামীর সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের পেশা বেঁছে নিয়েছেন। তারা বিভিন্ন শস্যের বীজ বপন ও ফসল সংগ্রহসহ সব ধরনের কৃষিকাজ করে থাকেন। গত সোমবার সকালে ধাপেরহাট ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামে ঘুরতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বসতবাড়ি আর গাছপালার ফাঁক দিয়ে তাকাতেই চোখে পড়ে দিগন্ত জুড়ে কৃষি ক্ষেত। এসব ক্ষেতে দল বেধে কাজ করছে নারী শ্রমিকরা। কাজ করতে করতে মনের আনন্দে আঞ্চলিক ভাষায় গান ও গীত গাইতেও দেখা যায় নারী শ্রমিকদের। ওদের মধ্যে শেফালী নামে এক নারী শ্রমিকের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, পরিবারের অভাব কিছুটা দূর করতেই তার এই জীবন যুদ্ধে নামা। কয়েকজন নারীকে দিয়ে ধান ক্ষেতে কাজ করাচ্ছিলেন খামারপাড়া গ্রামের মঞ্জুর রহমান সাবু। তিনি বলেন, এলাকায় কাজের জন্য পুরুষ মানুষের সংকট এবং তাদের মজুরীও নারী শ্রমিকদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই নারী শ্রমিক দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। রোজ সকালে তারা রান্নাবান্না সেরে সন্তানদের খাইয়ে দলবেঁধে কাজে বেরিয়ে পড়েন। পাঁচ থেকে ১০ জনের প্রতিটি দলে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে দুই থেকে তিনজন পুরুষ শ্রমিক থাকেন। সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে তাদের শ্রম দেয়া। পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করতে মজুরির টাকা বাদ দিয়েও বাড়তি হিসাবে বিড়ি সিগারেট দিতে হয় কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে তার কোন প্রয়োজন হয় না।