শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

ধাপেরহাটে তহসিলদারের বিরুদ্ধে মেলায় খাস আদায়ের ৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ধাপেরহাটে তহসিলদারের বিরুদ্ধে মেলায় খাস আদায়ের ৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ধাপেরহাট (সাদুল্যাপুর) প্রতিনিধিঃ সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের তহসিলদার সামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মেলার ‘খাস আদায়ের’ ৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে গত বুধবার উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় এই অভিযোগ উত্থাপন করেন ধাপেরহাট ইউনিয়নের চেয়াম্যান শফিকুল কবির মিন্টু।
এসময় সভায় উপস্থিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এই অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন তহসিলদার সামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে ধাপেরহাটের পীরেরহাট মেলার খাস আদায়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এজন্য ওই ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নিকট থেকে লিখিত অভিযোগ চাওয়া হয়েছে। সেটি পেলে অতিদ্রুতই তদন্ত করে তহসিলদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে দীর্ঘকাল ধরে সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের ৪১ পীরের পূণ্যভূমিখ্যাত পীরেরহাটে প্রতি বৈশাখ মাসের প্রথম শনিবার মেলা বসে। ওইদিন মেলায় আসে অগণিত নারী-পুরুষ। সরকারি খাস জমিতে মেলা বসায় স্থানীয় প্রশাসন একদিনের জন্য ইজারা প্রদান করেন। প্রকাশ্যে অথবা গোপন ডাকে ইজারা নিয়ে ইজারাদার মেলায় টোল হিসেবে অর্থ উত্তোলন করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে গত দুই (২০২০ ও ২০২১) বছর এই মেলা বসেনি। তাই কাউকে ইজারা প্রদান করা হয়নি। সর্বশেষ দুই বছর আগে ২০১৯ সালে এই মেলা ইজারা প্রদান করা হয়েছিল ২ লক্ষ ৫১ হাজার ৪০০ টাকায়। ইজারার সমুদয় টাকা জমা করা হয় সরকারি কোষাগারে। এর পর চলতি বছর এই মেলার আয়োজন করা হলে কেউ ইজারা নেয়নি। যার কারনে খাস আদায়ের দায়িত্ব বর্তায় ধাপেরহাট ইউনিয়নের তহসিলদারের উপর। তিনি বিশাল এই মেলার খাস আদায় দেখান মাত্র ২০ হাজার ১৭০ টাকা। মেলা শেষ হওয়ার কয়েকদিন পর সেই টাকা জমা করেন সরকারি কোষাগারে।
এনিয়ে ধাপেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল কবির মিন্টু বলেন পীরেরহাট মেলায় ৫ লক্ষাধিক টাকা খাস আদায় করেন তহসিলদার সামছুল ইসলাম। কিন্তু সেখান থেকে সরকারি কোষাগারে মাত্র ২০ হাজার ১৭০ টাকা জমা দিয়েছেন। আর সমুদয় টাকা তিনি আত্মসাত করেন। তাই সরকারি টাকা আত্মসাতকারী তহসিলদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
এনিয়ে তহসিলদার সামছুল ইসলাম বলেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি পীরেরহাট মেলার খাস আদায়ের সমুদয় টাকা (২০ হাজার ১৭০) সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন। জনবলের অভাবে তিনি এর বেশি খাস আদায় করতে পারেননি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ চাইলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে পারেন।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে পীরেরহাট মেলার প্রকাশ্যে ইজারা ডাক দেওয়ার জন্য মেলা বসার দুই দিন আগে ধাপেরহাট বন্দরে যান সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাইফুর রহমান। কিন্তু তহসিলদার সামছুল ইসলাম কৌশলে সেখানে কাউকে ইজারা ডাকে অংশ নেওয়া সুযোগ দেননি। যার কারণে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে মেলার ইজারা ডাক না দিয়েই চলে আসেন সহকারি কমিশনার। এনিয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাইফুর রহমান বলেন মেলার ইজারা ডাক না হওয়ায় খাস আদায়ের সুযোগ পায় তহসিলদার সামছুল ইসলাম।
ধাপেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাহাদৎ হোসেন জানান মেলায় কাঠের গলি, হুরুমের গলি, মাছের গলি, মিষ্টির গলি, চুড়ি-ফিতার গলি, রসুন-পিয়াজ গলি, মসলার গলি, কামার-কুমার গলি উচ্চ ডাকে গোপনে ইজারা দেন তহসিলদার সামছুল ইসলাম। সেখান থেকে আদায় করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা।
স্থানীয় মেহেদি হাসান একরামুল বলেন তহসিলদার সামছুল ইসলামের বাড়ী পাশর্^বর্তি ভাতগ্রাম ইউনিয়নে। চার বছরের অধিক সময় ধরে তিনি এখানে কর্মরত থাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালীদের নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরী করেছেন। এছাড়া ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক প্রস্তস্থ্য করনের জমি অধিগ্রহণের কাজেও তিনি সরকারের বাড়তি অর্থ ব্যায়ে স্থানীদের সহযোগিতা করেছেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com