শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

ত্রিমোহিনী জংশন স্টেশন বন্ধ যাত্রী সাধারণের চরম দুর্ভোগ

ত্রিমোহিনী জংশন স্টেশন বন্ধ যাত্রী সাধারণের চরম দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টারঃ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের গাইবান্ধা-বোনারপাড়া রেল সেকশনের ত্রিমোহিনী রেলওয়ে জংশন স্টেশনটি ক্লোজড করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে এই স্টেশন থেকে দুর দুরান্তে যাতায়াতকারী রেল যাত্রীদের নানা সমস্যা সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই রেল স্টেশনটি পুনরায় চালু করার জন্য এতদাঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ দাবী জানালেও তাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনই কর্ণপাত করছেন না।
ত্রিমোহিনী জংশন স্টেশন ক্লোজড করা হলেও এই স্টেশনে এখনও প্রতিদিন সান্তাহার-লালমনিরহাট ও সান্তাহার-পঞ্চগড়ের মধ্যে চলাচলকারী ৭টি লোকাল আপ ও ডাউন ট্রেনের স্টপেজ রয়েছে। কিন্তু কোন ইন্টারসিটি ট্রেনের স্টপেজ নেই। টিকিট কাউন্টার না থাকায় যাত্রীদের ট্রেনে উঠে টিকিট চেকারের কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। স্টেশনে যাত্রীদের বসার জায়গা ও টয়লেট নেই। এমনকি পানীয়জল ও বৈদ্যুতিক আলো না থাকায় এবং ট্রেন কখন আসবে তা জানার ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেন যাত্রীদের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তদুপরি নারী যাত্রীদের এক্ষেত্রে নিরাপত্তাসহ নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
সরেজমিনে ত্রিমোহিনী জংশন স্টেশন পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, এই রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ও টিকিট কাউন্টারের কক্ষে তালা ঝোলানো। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে এই স্টেশনটি ক্লোজড করার পর থেকেই এখানকার স্টেশন মাস্টারসহ রেলের সব স্টাফ স্টেশন ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে স্টেশন ও কাউন্টার কক্ষ। স্টেশন সংলগ্ন জমিয়ে রাখা মূল্যবান রেলের লোহার পাতসহ সব জিনিসপত্র খোয়া যাচ্ছে। স্টেশনের পাশের রেলওয়ের স্টাফ কোয়াটারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্টেশন ও স্টাফ কোয়াটারের জমি দখল করে তাতে ধান চাষ ও কলা চাষ সহ নানা ফসল চাষ করছে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন। তদুপরি স্টেশনের আশেপাশের এলাকা দখল করে বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ত্রিমোহিনী জংশন স্টেশন থেকেই বালাসী ফেরীঘাট এবং বোনারপাড়া-সান্তাহার এই দুটি রেল সেকশনে রেল চলাচল অব্যাহত ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদের বালাসী-বাহাদুরাবাদঘাট হয়েই রেলওয়ে ফেরী পারাপারের মাধ্যমেই দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর-ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে ছিল উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলার রেল যোগাযোগ। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে রেল ও সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ এই রুটে ফেরী চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে ত্রিমোহিনী-বালাসীঘাট রেলপথে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে রেল লাইনও পরিত্যক্ত হয়ে যায়। রেলওয়ে ফেরী চলাচল শুরু করে বিকল্প এই পথে পুনরায় আবারও ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের রেল চলাচলের উদ্যোগ ইতোপূর্বে একাধিকবার নেয়া হলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেয়ানগঞ্জ যাতায়াতের ক্ষেত্রে এতদাঞ্চলের যাত্রীদের ট্রেনযোগে সরাসরি যাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পেরিয়ে দেয়ানগঞ্জ গিয়ে সেখান থেকে ঢাকাসহ ওই সমস্ত এলাকায় ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এব্যাপারে পঞ্চগড়গামি ৭নং আপ উত্তরবঙ্গ মেইল ট্রেনের গার্ড ফিরোজ হাসান জানালেন, ত্রিমোহিনীতে সব লোকাল ট্রেনের স্টপেজ মাত্র ২ মিনিট। ক্লোজড স্টেশন বলে এখানে সতর্ক থাকতে হয়, তবে কবে নাগাদ এই স্টেশন আবার চালু হবে তা তিনি অবগত নন বলে তিনি জানালেন।
ত্রিমোহিনী স্টেশনের কুলি সর্দার মোঃ মিলন মিয়া ও বোয়ালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার কাজী মোঃ আজিজার রহমান এরাকাবাসির দাবী মোতাবেক অবিলম্বে স্টেশনটি চালু সহ রেল অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা জানিয়ে প্রতিকারের দাবি জানান। তারা উল্লেখ করেন, এ স্টেশনে ট্রেনের স্টপেজ ২ মিনিট হলেও ১ মিনিটের বেশী এই স্টেশনে ট্রেন থামে না। এতে যাত্রীদের ট্রেনে উঠানামা করতে বিশেষ করে বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এজন্য অন্ততঃ ২ মিনিটের বেশী ট্রেনের স্টপেজ তারা দাবি করেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com