মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১০ অপরাহ্ন

জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার পরামর্শঃ অচেনা প্রাণীর আক্রমণে সন্ত্রস্ত পলাশবাড়ীর মানুষ

জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার পরামর্শঃ অচেনা প্রাণীর আক্রমণে সন্ত্রস্ত পলাশবাড়ীর মানুষ

স্টাফ রিপোর্টারঃ পলাশবাড়ীতে ছড়িয়েছে অচেনা এক প্রাণী। প্রায়ই মানুষকে আক্রমণ করছে এ প্রাণী। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণীটির অবস্থান শনাক্ত করতে না পারায় কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
প্রায় দেড় মাস আগে পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুকজামিরা গ্রামে প্রথম এই প্রাণীর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুতই পাশের গ্রামগুলো থেকে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসতে শুরু করে।
আক্রান্ত গ্রামগুলো হলো-ইউনিয়নের তালুক কেঁওয়াবাড়ি, হরিনাথপুর, কিশামত কেঁওয়াবাড়ি, খামার বালুয়া ও দুলালেরভিটা।
গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত গত চার দিনে নতুন করে আক্রমণের শিকার হয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন-কিশামত কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের আফসার আলী (৫০), খামার বালুয়া গ্রামের আব্দুল হালিম (৪৫) এবং দৃলালেরভিটা গ্রামের ছাব্বির শেখ (৫২)। খেতে কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন তাঁরা। এরপর থেকে কৃষকেরা মাঠে কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
এর আগে আক্রান্তদের মধ্যে আমিরুল, হামিদ মিয়া, আফছার আলী, সুমি বেগম, মনজিলা বেগম, পারভীন বেগম, শেফালি বেগম, মুক্তা বেগমের নাম জানা গেলেও এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জন ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
জন্তুটি পাগলা শিয়াল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আক্রান্তদের ভাষ্যমতে, প্রাণীটি দেখতে কুকুর কিংবা শিয়ালের মতো। মাথা ও লেজ আকারে বড়। শরীরে ডোরাকাটা দাগ। শক্তিশালী জন্তুটির রয়েছে অনেক উঁচুতে লাফানোর ক্ষমতা। একলাফে প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের ঘাড়ে উঠে নাকে মুখে কামড় বসায় প্রাণীটি।
ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, ধানের জমি থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এসে আক্রমণ করে। হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় বসিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন ঘটনা।
গতকাল ওই সব গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলেও কয়েকজন লাঠি হাতে বের হচ্ছেন। দুপুর গড়াতেই এলাকায় সুনসান নীরবতা নেমে আসছে। রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ছে। আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারছেন না তাঁরা। কার্যত থমকে গেছে এলাকার জনজীবন।
হরিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোঃ রুবেল মিয়া জানান, ঘটনার শুরু দেড় মাস আগে। মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হন তালুক জামিরা গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু (৫৬)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
একই দিনে আরও তিনজন আক্রান্ত হন। এরপর থেকে ঘটছে একের পর এক আক্রমণের ঘটনা। বর্তমানে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে জন্তুটির বিচরণ।
তালুকজামিরা গ্রামের বাসিন্দা রাণী বেগম জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও এই জন্তুর আক্রমণের ভয়ে শিশুদের স্কুলে পাঠানো হচ্ছে না। আমন মৌসুম চলছে। মাঠে ব্যস্ততা থাকলেও কৃষকেরা আতঙ্কে যেতে পারছে না। গেলেও দুপুর গড়ালেই বাড়ি ফিরছেন।
পলাশবাড়ী থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, ওই সব গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আতঙ্ক কাটাতে গ্রামে-গ্রামে পুলিশ টহল দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট হরিনাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রাকিব হোসেন বলছেন, এটা মেছোবাঘ কিংবা শিয়াল হতে পারে। আমরা তালুকজামিরাসহ অন্যান্য গ্রামে গিয়ে টহলসহ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানে চলাফেরা করার পরামর্শ দিচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাব হোসেন বলেন, মূলত পাগল শিয়ালের আক্রমণে মানুষ হতাহত হচ্ছেন। শিয়াল যখন জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়, তখন তারা মানুষ ও যেকোনো প্রাণীকে কামড়ায়। ফলশ্রুতিতে তারাও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হতে পারে। সে কারণে মানুষ বা গবাদিপশু যেই আক্রমণের শিকার হচ্ছে তাঁকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দিতে হবে।
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, প্রাথমিক ভাবে জন্তুটি পাগল শিয়াল বলে ধারণা করা হলেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে ওই এলাকায় একটি শিয়ালকে স্থানীয়রা পিটিয়ে হত্যাও করেছে। হয়তো আরও পাগলা শিয়াল থাকতে পারে সে কারণে আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। আমরা আক্রান্তদের সরকারি ভাবে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com