মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা জেলা শহরে চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজের অংশ হিসাবে পুরাতন জেলখানা এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে গোলচত্বর। কিন্তু এ নির্মাণ কাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করায় তাতে বাধা দেয় স্থানীয় জনগণ। এ খবর পেয়ে গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে এসে গোলচত্বর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।
এদিকে সওজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে ঠিকাদার লোকচক্ষুর আড়ালে রাতে আধারে এই চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে গত বুধবার গাইবান্ধা জেলা প্রশাসককে অভিযোগ দিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের বড় মসজিদের মোড় থেকে পশ্চিমে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ বিগত ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম এমপি। যার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১১৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে সড়কসহ দুইপাশে ড্রেন নির্মাণে ৬ কোটি ও জমি অধিগ্রহণের জন্য ১১১ কোটি টাকা।
কাজের দায়িত্ব পায় ঢাকাস্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স। সূত্রটি আরও জানায়, ইতোমধ্যে পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী সড়ক নির্মাণ কাজ মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ ছিল। সম্প্রতি মামলার জটিলতা কেটে যাওয়ায় এই অংশের কাজও শুরু হয়েছে।
গাইবান্ধা শহরের পুরাতন জেলখানা এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, নিম্নমানের ইটসহ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে এই চারলেন সড়কের কাজ করা হচ্ছে। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের লোকজন চাঁদাবাজির মামলা ও হুমকি প্রদান করে। তিনি আরও জানান, তারপরও গত বুধবার দুপুরে শহরের পুরাতন জেলখানা এলাকায় নিম্নমানের ইট দিয়ে নকশার চেয়ে ছোট করে গোলচত্বরের কাজ করার সময় স্থানীয় জনতা বাধা দেয়। খবর পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফিরোজ আখতার ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আফজালুল হক ঘটনাস্থলে এসে পৌছালে জনগণ তাদের ৩ নম্বর ইট গুলো হাত দিয়ে ভেঙ্গে দেখান। বাধ্য হয়ে তারা গোলচত্বর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী নিম্নমানের কাজ না করার প্রতিশ্রুতি দিলে জনগণ শান্ত হয়। এছাড়া প্রথম দিকে শুধুমাত্র দিনের বেলা নির্মাণ কাজ করা হয়। কিন্তু গত দুইমাস ধরে রাতের আধারেও ধীর গতিতে কাজ চলছে। প্রতিদিন রাত ১০টার দিকে কাজ করা শুরু হয়। চলে ভোররাত পর্যন্ত। এ সুযোগে সওজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে ঠিকাদার নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠে।
গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সওজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার জন্যই সারারাত কাজ করছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইবান্ধা সওজের জনৈক
এক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, সড়ক নির্মাণে প্রাক্কলন (স্টিমেট) অনুযায়ী, সড়কের কাজের প্রথম স্তরে (সাব-বেজ) ভালো মানের খোয়া ও বালুর অনুপাত শতকরা ৭০:৩০ দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে ৪০:৬০। কার্পেটিং এর নিচের স্তরে ভালো মানের ভাঙা পাথর ও বালুর অনুপাত শতকরা ৭৫:২৫ হওয়ার কথা। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে ৬০:৪০। এসব কাজ দুইবার করে করার কথা থাকলেও কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। এ ছাড়া নর্দমা নির্মাণে ১২ মিলিমিটার ব্যাসের রডের পরিবর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১০ মিলিমিটার ব্যাসের রড ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঢালাই কাজে পোর্টল্যান্ড (সিম-১) সিমেন্টের পরিবর্তে সাধারণ সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। পাথর, বালু ও সিমেন্টের অনুপাত অবস্থা ভেদে ৪:২:১ ও ৩:১.৫:১ হওয়ার কথা। কিন্তু রাতের কাজে তদারকি না থাকায় পাথর, বালু ও সিমেন্টের অনুপাত ৭:৪:১ ও ৬:৩:১ দেওয়া হচ্ছে। ইট ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের। এদিকে কাজও চলছে ধীরগতিতে।
এসব বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এর মালিক মহিউদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।