শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১২ পূর্বাহ্ন

চলতি বোরো রোপণ মৌসুমে গাইবান্ধায় রাসায়নিক সারের অতিমূল্যে বিপাকে কৃষক

চলতি বোরো রোপণ মৌসুমে গাইবান্ধায় রাসায়নিক সারের অতিমূল্যে বিপাকে কৃষক

স্টাফ রিপোর্টারঃ বোরো রোপনের ভরা মৌসুম। মাঠে মাঠে কৃষক ব্যস্ত ধানের যতেœ। সাধারণত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বোরো রোপণের উপযুক্ত সময়। কৃষকেরা এখন জমি তৈরি ও রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ধান রোপণের আগে টিএসপি ও এমওপি সার জমিতে ছিটালে ফলন ভালো হয়। সবখানে সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গাইবান্ধায় চলতি বোরো রোপণ মৌসুমে বেশি দামে টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি সারে ৫ থেকে ১৩ টাকা বেশি নিচ্ছেন। এ বিষয়ে কৃষি অধিদপ্তরের মাঠকর্মীদের কোনো তদারকি না থাকার কথা বলছেন কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৭টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ সম্পন্ন হয়েছে ।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মাসে ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন টিএসপি, ৩ হাজার ২৮৭ মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিলারদের মধ্যে ১ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন টিএসপি ও ১ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন এমওপি সার সরবরাহ করা হয়েছে। এসব সার বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ১১১ জন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ১১৮ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
সরকার ৫০ কেজির প্রতি বস্তা টিএসপি ১ হাজার ১০০ এবং এমওপি ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ হিসাবে প্রতি কেজি টিএসপি ২২ টাকা ও প্রতি কেজি এমওপি ১৫ টাকায় বিক্রির কথা। কিন্তু প্রতি কেজি টিএসপি ৩০-৩৫ টাকা এবং এমওপি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, খুচরা বিক্রেতারা তাঁদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। যিনি রসিদ চাইছেন, তাঁর কাছে সার বিক্রি করা হচ্ছে না।
সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক ( ৪৫) বলেন, ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা তাঁদের দোকানে লোকদেখানো মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সেই দামে সার বিক্রি করছেন না। তাঁরা প্রতি কেজি টিএসপি ৩০-৩৫ টাকা এবং এমওপি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
সাদুল্লাপুরের মতো সদর উপজেলাতেও বেড়েছে সারের দাম গাইবান্ধা সদর উপজেলার হাসপাতাল বালুয়া বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ইচ্ছা করে সারের দাম বেশি নেওয়া হয় না। ডিলাররা তাঁদের কাছে বেশি দাম রাখায় তাঁরাও বেশি দামে সার বিক্রি করছেন।
তবে একই বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলার শামসুজ্জোহা বলেন সারের, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ার কারণে বাজারে সারের সংকট তৈরি হয়েছে। এ সুযোগে কোনো কোনো ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা বেশি দাম নিতে পারেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডিলার বলেন, বিসিআইসি ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ীই সারের জোগান দেয়। কিন্তু আমদানিকারকেরা গত রবি মৌসুমে টিএসপি ও এমওপি সারের সংকট তৈরি করেন, যা এখনো রয়েছে।
সাধারণত বাজারে সারের চাহিদা, জোগান ও দাম তদারক করেন বিসিআইসি ও বিএডিসির মাঠকর্মীরা। তবে গাইবান্ধা সদর উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের কৃষক সাদ্দাম মিয়া (৫২) বলেন, দাম বেশি নেওয়া সত্ত্বেও এখনো কাউকে তদারক করতে দেখেননি।
তবে গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বেলাল হোসেন বলেছেন নিয়মিত বাজার তদারক করা হচ্ছে। তবে সারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে কি না, তার খোঁজ নেওয়া হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com