স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরাঞ্চলের ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে চরাঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার শিক্ষার্থী গেল বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় স্কুলের আসবাবপত্র, স্কুলের বেড়াসহ বাথরুম ও ক্লাসরুম নষ্ট হয়ে যায়। সরকারিভাবে মেরামতের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব জেনে শুনেও মাথা ঘামাচ্ছে না গাইবান্ধায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। শিক্ষা বিভাগের কাগজ অনুযায়ী গত বছর বন্যায় গাইবান্ধা সদরের ব্রহ্মপুত্র নদীর চরাঞ্চলের চিথুলিয়া দিগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিদাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজে চিথুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বন্যার পর ৩টি স্কুলের বেড়া তুলে স্কুলের অস্তিত্ব জানান দেয়া হয়েছে। ৩ স্কুলের ক্লাসও ঠিকমতো হয় না। মাস্টাররাও যান মাঝে মাঝে। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে এই ৩ স্কুলের অন্তত ৪০০ শিক্ষার্থী। তারা স্কুল ভবন না থাকায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না।
৩ স্কুলের বিপুল পরিমাণ বই সরবরাহ দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে মোল্লারচর, চিথুলিয়া দিগর নতুন পাড়া, চিথুলিয়ার চর, বামনিপাড়াসহ ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে যেনতেনভাবে। পোড়ার চরের বাসিন্দা রাজা মেম্বর বলেন, তিস্তা নদীর চরাঞ্চল সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পূর্ব লাখিয়ার পাড়া, চরহরিপুর, চর হরিপুর গুচ্ছগ্রাম, কানি চরিতাবাড়ি, কানি চরিতাবাড়ি মোল্লাপাড়া, পারা সাদুয়া, পারা সাধূয়া বালিকা, হরিপুর, হরিপুর বিএসএম, চর চরিতাবাড়ি, রাঘব, চর উত্তর ধুমাইটারী, দক্ষিণ শ্রীপুর বাড়াইকান্দি, শ্রীপুর কুরুয়াবাদা, চ্যামারী বালিকা, কলিম সরকারের চর, উজান বুড়াইল, বোচাগাড়ী ভুইয়া, ভাটি বুড়াইল, চর পূর্ব লালচামার, চর ভাটি বুড়াইল, বোচাগাড়ী নব, ভোরের পাখি, চর কাপাসিয়া, চর কাপাসিয়া নব, পাগলার হাট, ভাটি কাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৮টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্কুলগুলোর কাজ চলছে ৫-৬টা বেঞ্চ দিয়ে। ভবনগুলোতে কোনো ক্লাসরুম আলাদা করা নেই। পাটিশন বেড়াগুলো বানের পানিতে ভেসে গেছে। এখন এই দুরবস্থার মধ্যে ২৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুলভবনের টিনের চালা খাড়া করে রাখা হয়েছে। সেখানেই চলে একসঙ্গে ৩ ক্লাসের পাঠদান। সরকারিভাবে বলা হয়, যমুনা নদীর বন্যার পানিতে কাইয়ার হাট, চর উড়িয়া, দাড়িয়ারভিটা, মধ্য উড়িয়ার চর, রতনপুর, ঝানজাইর কমিউনিটি, চর ডাকুমারী, জিয়াডাংগা, জিয়া ডাংগা কমিউনিটি, আঙ্গারীদহ, কটকগাছা, গলনা, পূর্ব গলনা, গলনা আনোয়ার হোসেন, দেলুয়াবাড়ি, জামিরা, বাগবাড়ি, সরদারের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ৫৬টি স্কুলের অবস্থা ভয়াবহ। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় কোনো কোনো ভবন খাড়া করা হলেও তা শুধু নামমাত্র। সব মিলিয়ে ক্লাস বলতে একটি। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এলাকাবাসীর। মজিবুর ম-ল বলেন, কিসের পড়ালেখা? মাস্টাররা আসি চেয়ার নিয়া বাইরে বসি রোদ পোহায়। আর ছাত্ররা দোড়াদৌড়ি করে। এমনিতে পানির দিনে স্কুল বন্ধ থাকে দিনের পর দিন। শুকনা মৌসুমে যে কয়দিন ক্লাস হয় তা নামমাত্র। আমরা ছোলপোল নিয়া পড়ছি বেকায়দায়। স্কুলে ভালো পড়ালেখা হয় না। স্কুলগুলো আমরা খাড়া করে দিয়েছি কিন্তু কিসের কি স্কুল। ওরা বেতন পায় বলে স্কুলে আসে। কিন্তু ছাত্রছাত্রী সংগ্রহ এবং তাদেরকে স্কুলমুখী করার মতো কোনো কাজ মাস্টাররা করে না। সে কারণে স্কুল বয়সে ঝরে পড়ছে অনেকেই। যমুনা নদীর পানি উপচিয়ে সাঘাটায় বন্যায় ক্ষতি হয়ে চরাঞ্চলের পাতিলবাড়ি, চর হলদিয়া, কুমারপাড়া, খামার পবন তাইড়, দক্ষিণ সাথালিয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলসহ ২১টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সরঞ্জামসহ আসবাবপত্র ও স্কুল ঘরের বেড়ার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর শিক্ষকদের চেষ্টায় স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় স্কুল ভবন খাড়া করা হলেও আগের মতো আর শিক্ষার্থী নেই। এলাকার সমাজকর্মী সাহাদৎ হোসেন ম-ল বলেন, স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। সেদিকে শিক্ষক বা শিক্ষা বিভাগের কর্তাদের কোনো নজর নেই। তারা শুধু শিক্ষার্থীদের নামের বরাদ্দ বিস্কুট নিয়ে ব্যস্ত। বিস্কুটের কারণে কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসে গেলেও এর পরিমাণ খুব অল্প। গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হারুনর রশিদ বলেন, প্রতিটি স্কুলে অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। অনেক স্কুলে হয়তো অবস্থানগত কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব বেশি নেই। তবে বন্যায় ১০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, পালাক্রমে স্কুলগুলোতে পাঠদান ব্যবস্থাকে উন্নত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।