শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

গোবিন্দগঞ্জে যানচলাচল বিচ্ছিন্নঃ সুন্দরগঞ্জে তিস্তা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে গেছে

গোবিন্দগঞ্জে যানচলাচল বিচ্ছিন্নঃ সুন্দরগঞ্জে তিস্তা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে গেছে

গোবিন্দগঞ্জ থেকে টুকু প্রধানঃ গোবিন্দগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে শনিবার বিকেল পর্যন্ত করতোয়া নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ১১৬ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় গোটা উপজেলায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গোবিন্দগঞ্জ -দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় আজও ওই সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রযেছে।
বন্যায় দরবস্ত, তালুককানুপুর, মহিমাগঞ্জ, রাখালবুরুজ, শিবপুর, শালমারা, কোচাশহর, ফুলবাড়ি, নাকাই, হরিরামপুর ও সাপমারা ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের রাস্তাঘাটসহ শত-শত বিঘা ফসলী জমি পানিতে ডুবে রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের ঘর বাড়িতে পানি ওঠায় পানিবন্দী পরিবারগুলো তাদের গবাদি পশু, আসবাবপত্র নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। শুকনো খাবার ও জ্বালানির অভাবে ওইসব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার অনেকে ইতিমধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে গরু, ছাগল নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে উপজেলার তিন হাজার হেক্টরের বেশী জমির আমন ধান, আখ, এবং বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
অপর দিকে, গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ওই সড়কে আজও ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন জানান, গতকাল শনিবার পর্যন্ত বন্যার্ত মানুষের জন্য ৩৫মেঃ টন চাল, ৫০ হাজার নগদ টাকা ও ৪শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পৌর এলাকায় বন্যার্ত মানুষের জন্য ৮ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়ায় পৌর মেয়র আতাউর রহমান সরকার বন্যার্ত মানুষের মাঝে সেসব বিতরণ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার খালেদুর রহমান জানান, বন্যায় ৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমির রোপা আমন ও ২শ’ ৫০ হেক্টর জমির শাক-সব্জি ও ডালের আবাদ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা মৎস্য অফিসার ইমরান হোসেন চৌধুরী জানান, উপজেলার মোট ১ শ’ ৫০জন চাষীর ১শ’ ৮০টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে-যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২২ লক্ষ টাকা।
সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ অবিরাম বর্ষণের তোড়ে লালচামার-সুন্দরগঞ্জ তিস্তা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি বেলকা বাজার সংলগ্ন স্থানে ধসে গেছে। যে কোন মহুর্তে বাঁধটি ভেঙে গিয়ে তিস্তার পানি ঢুকে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ধসে যাওয়া স্থানটি মেরামতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ। এদিকে বাঁধটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পূবাঞ্চলের যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি। প্রতিদিন ছোটখাট হাজারও যানবাহন বাঁধটি দিয়ে চলাচল করে। বাঁধটির ডানতীর কামারজানী হতে বামতীর ঘগোয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে সম্প্রতিকালের বন্যায় অর্ধশতাধিক স্থানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষনে ওইসব বড় গর্ত বসে গিয়ে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। বেলকা গ্রামের স্কুল শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান বৃষ্টির তোড়ে বেলকা বাজার সংলগ্নস্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ধসে গেছে। সে কারনে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রী সাধারন। তিনি বলেন তিস্তা পিসি গার্ডার সেতুর সংযোগ সড়ক হিসেবে গত বছর সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ মাটি ভরাট করলেও তা তদারকি না করায় বাঁধটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান বাঁধটির মধ্যে সৃষ্টগর্ত মেরামত করা একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে বাঁধটি ভেঙে গেলে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হবে। তিনি বলেন এক বছর অতিবাহিত হলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট এখন সংস্কার করা হয়নি। উপজেলা নিবার্হী অফিসার ভারপ্রাপ্ত ও সহকারি কমিশনার (ভুমি) শাকিল আহমেদ জানান বিষয়টি তিনি জানেন। সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে বাঁধটি সংস্কার ও মেরামতের জন্য বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির ওই অংশ তিস্তা পিসি গার্ডার সেতুর সংযোগ সড়ক হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ কাজ করছে। আশা করছি অতিদ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ স্থান মেরামত করা হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com