শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন

গোবিন্দগঞ্জে বড়দহ সেতুতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

গোবিন্দগঞ্জে বড়দহ সেতুতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা-নাকাই-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বড়দহ সেতুতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত মুল্যের অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এমনকি মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান টোলের আওতামুক্ত হলেও তাদের কাছে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এনিয়ে আদাকারিদের সঙ্গে যানবাহন চালকদের প্রায়ই বাক-বিতন্ডা হচ্ছে। চালককে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে যানবাহন চালকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, কোন সেতুর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটারের বেশি হলে সেটি টোলের আওতায় পড়ে। এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৫৩ মিটার। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারি যানবাহন থেকে টোল আদায়ে দরপত্র আহবান করা হয়। সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব পায় শহিদুল ইসলাম। তবে তাঁর কাছ থেকে টোল আদায়ের দায়িত্ব নেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি ও নবনির্বাচিত নাকাই ইউপি চেয়ারম্যান সাজু খন্দকার।
সূত্রটি জানায়, টোল আদায়ের মূল্য নিধারিত রয়েছে। এরমধ্যে প্রতিবার পারাপারের জন্য ট্রেইলার (ট্রলি) ১১৫, ভারী ট্রাক ১০০, মধ্যম ট্রাক ৫০, বড়বাস ৪৫, মিনি ট্যাক-ট্রলি ৪০, পাওয়ার টিলার-ট্রাক্টর ৩০, মিনিবাস-কোস্টার ২৫, মাইক্রোবাস ২০, পিক-আপ, কনভারশনকৃত জীপ, বেকার-ক্রেন ২০, সিডান কার ১৫ টাকা। টোল আদায় করা হচ্ছে ট্রেইলার (ট্রলি) ১৩০-১৪০, ভারী ট্রাক ১২০-১৫০, মধ্যম ট্রাক ৭০-৮০, বড়বাস ৭৫-৮০, মিনি ট্যাক-ট্রলি ৫০-৬০, পাওয়ার টিলার- ট্রাক্টর ৪০-৫০ টাকা, মিনিবাস-কোস্টার ৩৫-৪৫, মাইক্রোবাস ৩০-৩৫, পিক-আপ, কনভারশনকৃত জীপ, বেকার-ক্রেন ৩০-৪০, সিডান কার ২৫-৩০ টাকা।
বড়দহ সেতুটি নাকাই ও হরিরামপুর ইউনিয়নের সীমানায় নির্মিত। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, যানবাহন থেকে টোল আদায়ের দৃশ্য। সেতুর পুর্বপাশে দাঁড়ানো তিনজন আদায়কারি। তারা যানবাহন আসামাত্র বাঁশ দিয়ে আটকাচ্ছেন। টোল আদায় করছেন। এসময় অতিরিক্ত টোল নেওয়ার কথা কয়েকজন চালক জানালেন। সেতুতে টোলের তালিকা টানানো হয়নি। ফলে বহিরাগত চালকদের কাছে মনগড়া টোল নেওয়া হচ্ছে। এমনকি মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান টোলের আওতামুক্ত হলেও তাদের কাছে টাকা নেওয়া হচ্ছে।
নাকাই ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আজাদুল ইসলাম বলেন, সকাল বেলা ভাড়া হয় না। সেসময় সেতু পারাপার হতেও টোল দিতে হচ্ছে। টাকা না দিলে আদায়কারিরা গালিগালাজ করেন। একই গ্রামের অটোরিকশা চালক খাজা মিয়া বলেন, টোলের আওতামুক্ত হলেও প্রতিবার অটোরিকশা পারাপারের জন্য পাঁচ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের চাকরিজীবি শাহজাহান মিয়া বলেন, মোটরসাইকেল পারাপারে টোল নেওয়ার কথা নয়। বাধ্যতামুলক পাঁচ টাকা টোল নেওয়া হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জের হরিরামপুর গ্রামের ট্রাক্টর চালক মিল্লাত হোসাইন বলেন, ট্রাক্টর পারাপারের জন্য সরকার ৩০ টাকা টোল নির্ধারণ করেছে। অথচ নেওয়া হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। প্রতিবাদ করলে আদায়কারিরা নিরীহ চালককে গালিগালাজ ও মারধর করেন। বগুড়া জেলার ট্রাকচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বগুড়া থেকে নাকাই হয়ে গাইবান্ধার দুরত্ব কম। তাই এই রুটে যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু ১০০ টাকা টোল হলেও ১২০-১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে এই সেতুতে টোল আদায় বন্ধে স্থানীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে উঠে। গঠিত হয় বড়দহ সেতু টোল মওকুফ বাস্তবায়ন কমিটি। কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, সভা-সমাবেশ হয়। টোল আদায় বন্ধ হয়নি। বড়দহ সেতু টোল মওকুফ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৯৯৭ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৪৮ মিটার। কিন্তু সওজ বিভাগের কাজের দীর্ঘসূত্রিতার করণে নদী ভেঙ্গে সেতুর দৈর্ঘ্য ২৫৩ মিটারে দাঁড়িয়েছে। আঠারো বছরে সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে দরিদ্র মানুষকে আইনের ফাকে পড়ে টোল দিতে হচ্ছে। তাও ইচ্ছামত টোল নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই যানবাহন চালকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও মারধর করা হচ্ছে। অথচ দরিদ্র এলাকার মানুষের কাছে টোল না নেওয়ার শর্তে আন্দোলন শীথিল করে টোল আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়। সেই শর্ত এখন মানা হচ্ছে না। সাজু খন্দকার প্রভাব খাটিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন।
বড়দহ সেতুর টোল আদায়কারি শফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার যেভাবে আদায় করতে বলেন, যা নির্দেশ দেন, তারা তাই করে থাকেন। এখানে তাদের করণীয় কিছুই নেই। তবে তিনি চালকদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এসব বিষয়ে দায়িত্ব নেওয়া ঠিকাদার সাজু খন্দকার বলেন, চালকদের মারধরের অভিযোগ সঠিক নয়। সরকার নির্ধারিত হারেই টোল আদায় করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানের টোল নেওয়া হয়না। টোল আদায়ের দায়িত্ব না পাওয়া তাঁর প্রতিপক্ষ এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফিরোজ আখতার বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তের সত্যতা পাওয়া গেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com