শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গোবিন্দগঞ্জে ওয়াক্ফ এষ্টেটের সম্পত্তি দখলে নিয়ে এলপিজি গ্যাস এন্ড ফিলিং ষ্টেশন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভাধীন শাহ্পাড়া খলসি গ্রামের বাসিন্দা ইয়াকুব উদ্দিন শাহ্ তার সন্তানাদি না থাকায় ১৯১৬ সালে ৪৪৫৮ নং দলিলমুলে ইয়াকুব উদ্দিন শাহ্ ওয়াক্ফ এষ্টেটের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করেন। জমির পরিমান প্রায় সাড়ে ৬১ বিঘা। জীবদ্দশায় তিনিই সব দেখভাল করেছিলেন। ইয়াকুব উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী আমিরন নেছা স্বামীর ন্যায় তার নিজ নামীয় সম্পত্তি মৃত্যুর আগে মৌখিকভাবে ওয়াক্ফ এষ্টেটের নামে দান করে যান। তাদের দুজনের মৃত্যু হলে এই স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দেখভালের জন্য পালিত কন্যার ছেলে একই গ্রামের তবিবুর রহমানকে মোতাওয়াল্লি নিয়োগ দেওয়া হয়। এরই মাঝে ১৯৪৯ সালের ১৮ মে ওয়াক্ফ এষ্টেটে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেন তবিবুর রহমান। ওয়াক্ফ কমিশনের নির্দেশক্রমে ইয়াকুব উদ্দিন শাহ্র নামে ২১ একর ৬৮ শতক ও প্রজাবিলি হিসেবে ১২ একর ২৮ শতক সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করান তবিবুর রহমান।
এরপর ৪৬ বছর মোতাওয়াল্লি পদে দায়িত্ব পালন করেন তবিবুর রহমান। তার মৃত্যুর পর একই গ্রামের আব্দুর রহমান মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব পান। এরপর ওয়াহেদুজ্জামান এবং বর্তমান একই গ্রামের শাহ্ মো. জাকির আলম মোতাওয়াল্লির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, ইয়াকুব উদ্দিন শাহ ওয়াক্ফ এষ্টেটের এই সম্পত্তি একই গ্রামের মৃত আব্দুল বাকির ছেলে রেজা আহম্মেদ, জাকারিয়া, রাজ্জাক, মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান, মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে দুলু মিয়া, রেজাউল কবির, শহিদুল ইসলাম, মাসুদ মিয়া, মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মাহমুদ হোসেন, মৃত হাসিবল ইসলামের ছেলে সাহাবল, মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মোয়াক্কেল মিয়া, মৃত আনসার আলীর ছেলে লিটন মিয়া প্রভাব খাটিয়ে জবর দখল করে রেখেছেন। সম্পত্তিগুলো উদ্ধারে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
সম্প্রতি খলসি মৌজার জেএল নং- ১০৮ বর্তমান ১৪ নং খতিয়ানের সাবেক ১০৩৮ নং দাগের ৩৪ শতাংশ জমিতে এলপিজি গ্যাস এন্ড ফিলিং ষ্টেশন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
মোতাওয়াল্লি শাহ মো. জাকির আলম অভিযোগ করে বলেন, ৩৪ শতাংশ সম্পত্তির সকল কাগজপত্র শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত ইয়াকুব উদ্দিন ওয়াক্ফ এষ্টেটের নামে প্রস্তুত আছে। প্রভাব খাটিয়ে দখলে নিয়ে পৌরসভাধীন খলসি মিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম রাজু এলপিজি গ্যাস এন্ড ফিলিং ষ্টেশন নির্মাণ করছেন। এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম রাজু, রেজা আহম্মেদ ও হাবিবুর রহমানের নামে আদালতে মামলা করা হলেও তারা জোরপূর্বক তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
শফিকুল ইসলাম রাজুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেজা আহম্মেদ ও হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে এই সম্পত্তি এওয়াজ বদল ৫৭২৬ নং দলিল (জমি পরিবর্তন) করে নেওয়া হয়েছে। রেজা আহম্মেদ ও হাবিবুর রহমান ওয়ারিশ সূত্রে এই জমির মালিক। এনিয়ে আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান রয়েছে। তারাই আদালতের রায় পাবেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে রেজা আহম্মেদ বলেন, ওয়ারিশ সূত্রে ওই জমির মালিক আমরা। এনিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আশা করছি মামলার রায় আমরাই পাবো। আর আমরা জমি বিক্রি করিনি, শফিকুল ইসলাম রাজুর সাথে জমি এওয়াজ বদল করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব দেখভালের জন্য আইন অনুযায়ী মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করা হয়। মোতাওয়াল্লির লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।