মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ন

গোবিন্দগঞ্জের বড়দহ সেতুর ঢোল আদায় বন্ধঃ সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত

গোবিন্দগঞ্জের বড়দহ সেতুর ঢোল আদায় বন্ধঃ সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত

স্টাফ রিপোর্টারঃ গোবিন্দগঞ্জে বড়দহ সেতুর ঢোল আদায়ে সরকার অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। ঢোল আদায়ে সওজ বিভাগ দরপত্র আহবান করে। ঠিকাদার নিয়োগও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু‘ একটি স্বার্থন্সেষী মহলের প্ররোচনায় এই টোল আদায়ে বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। অদ্যাবধি প্রশাসনিক জটিলতা ও পদক্ষেপ গ্রহনে টালবাহনা করায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ সুত্র জানায়, ২০১৫ সালে গাইবান্ধা-নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে করতোয়া নদীর উপর বড়দহ সেতু নির্মিত হয়। সেতুর দৈর্ঘ্য ২৫৩ দশমিক ৫৬ মিটার এবং প্রস্থ ছয় দশমিক ১০ মিটার। সেতু নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ওই বছরের ২০ আগষ্ট ভিডিও কনফ্রান্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন। ওইদিন থেকে সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
সুত্রটি জানায়, ২০১৪ সালের ঢোল আদায়ের নীতিমালা অনুযায়ী, যে সেতুর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটারের উপরে, সেগুলো থেকে ঢোল আদায় করতে হবে। এরপর ঢোল আদায়ের জন্য ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর প্রথমবার দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু দরপত্রে কেউ অংশ নেননি। তাই পুনরায় দরপত্র আহবান করা হয়। এভাবে আট দফায় দরপত্র আহবান করেও কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। এরপর ২০১৭ সালের ৭ আগষ্ট নবম বার দরপত্র আহবান করা হয়। এই কাজের দায়িত্ব পায় শহিদুল ইসলাম। ওই বছরের (২০১৭ সাল) অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঠিকাদারের সঙ্গে এক বছরের জন্য ঢোল আদায়ের চুক্তি হয়। একবছরে ইজারা মুল্য নির্ধারন করা হয় ১২ লাখ ১২ হাজার ৬০০ টাকা।
এদিকে দায়িত্ব পেয়ে ঠিকাদার ঢোল আদায়ের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু ঢোল আদায়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সেতুর উপর মিছিল সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়। ওই স্বার্থন্সেষী মহলের প্ররোচনায় এই টোল আদায়ে বাধা প্রাপ্ত হয়। এরপর ঢোল আদায় বন্ধ থাকে।
এনিয়ে ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের তৎকালীন সাংসদ আবুল কালাম আজাদ সড়কমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেন। তিনি চিঠিতে বড়দহ সেতুর ঢোল মওকুফ করার আবেদন করেন। এরপর সড়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব ঢোলের বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে গাইবান্ধা সওজ বিভাগকে চিঠি দেয়। চিঠির প্রেক্ষিতে গাইবান্ধা সওজ ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি সচিবকে চিঠির জবাব দেন। চিঠিতে ঠিকাদারের টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে ঢোল মওকুফের সুপারিশ করে। সওজ বিভাগ এই সুপারিশের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রনালয়কে অবগত করে। অর্থ মন্ত্রনালয় ২০১৮ সালের ১৩ আগষ্ট ঢোল মওকুফ করা যাবে না মর্মে সড়ক মন্ত্রনালয়কে জানায়। এরপর সড়ক মন্ত্রনালয় একই সালের (২০১৮) ২৪ সেপ্টেম্বর ঢোল মওকুফ করা যাবে না মর্মে গাইবান্ধা সওজকে চিঠি দেয়। শুধু তাই নয়, সড়ক বিভাগ একই সালের ২৫ অক্টোবর ঢোল আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। এরপর থেকে ঢোল আদায়ে কোন অগ্রগতি নেই। অপরদিকে ঠিকাদার ঢোল আদায় করতে না পেরে চলতি বছরের ১৯ মে সড়ক মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৫ জুন সড়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব ঢোল আদায়ের বিষয়ে মতামত চেয়ে পুনরায় গাইবান্ধা সওজকে চিঠি দেন। গাইবান্ধা সওজ গত ৪ আগষ্ট ঠিকাদারের টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে ঢোল মওকুফে একই ধরনের সুপারিশ করে। এরপর সড়ক মন্ত্রনালয় চলতি সালের ২ অক্টোবর ঢোল আদায়ের বিষয়ে সভা করে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢোল আদায়ের জন্য ১০ অক্টোবর গাইবান্ধার ডিসিকে চিঠি দেয়। এরপর চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে ঢোল আদায় সংক্রান্ত সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। এদিকে বড়দহ সেতুর ইজারাদার জানান ৩ বছর যাবৎ টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। কার কারনে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা যাচ্ছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com