বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের নার্স ও আয়াকে বসশিস না দেওয়ায় শিশুর নাক থেকে অক্সিজেন খুলে নেওয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় শিশু দুইটির পরিবারের আহাজারিতে হাসপাতালের বারান্দা প্রকম্পিত হলেও হাসপাতালের তত্বাবধায়ক এসি রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখেননি। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার দুপুরের পর। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ ব্যপারে ডাঃ খায়রুন নাহারকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩ কার্য্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।
গত শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন তার একমাসের শিশু সন্তান আব্দুর রহমানকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের চিকিৎসক শিশুটিকে ভর্তি করাতে বলেন এবং দ্রুত অক্সিজেন দিতে বলেন। মোশারফ হোসেন শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করান। ভর্তি করার পর অক্সিজেন দেওয়া হলে শিশুটি সুস্থ্য হয়। এর পর শিশুটির বাবার কাছে নার্স রিমা আক্তার, রেহেনা বেগম ও মনিকা বেগম এবং আয়ারা বকশিস দাবি করে। তখন শিশুটির বাবা মোশারফ হোসেন নার্স ও আয়াদের বলেন, আমি জোহরের নামাজ পড়ে এসে আপনাদের বকশিস দেব। এই বলে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে মোশারফ নামাজ পরার জন্য হাসপাতালের মসজিদে যায়। তার আসতে একটু বিলম্ব হওয়ায় নার্স ও আয়ারা শিশুটির মা, খালা, দাদি ও নানির কাছে বসশি দাবি করে। শিশুটির মা ও খালা তাদের জানায় শিশুর বাবা নামাজ থেকে আসলেই বসশিস দেয়া হবে। কিন্তু নার্স ও আয়ারা তাতে রাজি না হয়ে শিশুটি নাক থেকে হ্যাচকা টান মেরে অক্সিজেনের পাইপ খুলে নেয়। অক্সিজেন খুলে দেওয়ার সাথে সাথে শিশুটির শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়। তখন শিশুটির মা, খালা, দাদিরা নার্স ও আয়াদের হাতে পায়ে ধরে আবারও অক্সিজেন লাগাতে বলে। কিন্তু পাষান্ড নার্স ও আয়াদের সামান্য মন গলেনি। এমনকি তাদের সাথে নার্স ও আয়ারা দুর্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এক পর্যায়ে শিশুটি মারা যায়। বিষয়টি হাসপাতালের ত্বত্তাবধায়কের কক্ষ থেকে দেখা গেলেও ত্বত্তাবধায়ক এসি কক্ষ থেকে বের হয়ে সেখানে উপস্থিত হননি। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
শিশুটির মা আনিছা বেগম বলেন, আমরা একাধিকবার নিষেধ করার পরও নার্স ও আয়া জোর করে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই আমার সন্তান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। শিশুটির বাবা মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, হাসপাতালের নার্স ও আয়ার অবহেলায় আমার সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমি দোষীদের বিচার দাবি করছি।
একই ভাবে গত শনিবার সকালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার উজির ধরনী গ্রামের ইয়াকুব আলীর ২ মাস বয়সের শিশুর পরিবারের কাছ থেকে বসশিস না পাওয়ায় তারও নাক থেকে অক্সিজেনের পাইপ খুলে দেয় নার্স ও আয়ারা। পরে ইয়াকুব আলীর শিশুটিও অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে হাসপাতালে মারা যায়। পরে মৃত শিশুটিকে কৌশলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ নবিউর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে হাসপাতালের কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ হারুনর রশিদ বলেন, তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে প্রকৃত ঘটনা কি।