মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১১ অপরাহ্ন

গাইবান্ধায় সার্বিবক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিতঃ ব্যাপক নদী ভাঙন

গাইবান্ধায় সার্বিবক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিতঃ ব্যাপক নদী ভাঙন

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি গতকাল রোববার পর্যন্ত এখনও বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পানি কমতে শুরু করায় বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোলল্লারচর ইউনিয়নে গত পাঁচদিনে বাজে চিথুলিয়া ও চিথুলিয়া গ্রাম দুটির ৩১৮টি পরিবার নদী ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর, হরিপুর ও কাপাসিয়ার পোড়ার চর এবং সাঘাটা উপজেলার হলদিয়ায় ব্যাপক নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৮১ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি ৫৪ সে.মি. উপর দিয়ে বইছে। তবে এ নদীর পানি এখনও বিপদসীমার বেশ কিছুটা নিচে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোববার বন্যা উপদ্রুত সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলায় আরও ৪০ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বরাদ্দকৃত চালের পরিমাণ দাড়ালো ২৫০ মে. টন। এছাড়া খয়রাতি সাহায্য হিসেবে নগদ সাড়ে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ফুলছড়ি প্রতিনিধিঃ টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলছড়ি উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার পানিতে বাড়ি ঘরে হাটু থেকে কোমর পানি ওঠায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন চরাঞ্চলের মানুষগুলো। এসব চরের মানুষ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সেখানে শুকনা খাবার সরবরাহ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। গতকাল রবিবার সরেজমিন উপজেলার উড়িয়া ও ফজলুপুর ইউনিয়নের চরগুলো ঘুরে এসব চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় চরম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, জিগাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ী পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, দুইটি জামে মসজিদ, জিগাবাড়ী বাজার নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, জিগাবাড়ী ঈদগাঁ মাঠ, একটি বিএস কোয়ার্টার, ৩টি মোবাইল টাওয়ার ও এরেন্ডাবাড়ী বাজার। নদী ভাঙ্গন এলাকা থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরেই এসব প্রতিষ্ঠান অবস্থান করছে। তাছাড়া জিগাবাড়ী বাজারে অবস্থিত ২৫০টি দোকানের ব্যবসায়ীরা চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে। ইতিমধ্যে বাজার এলাকার জামে মসজিদটি নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার কফিল উদ্দিন জানান, নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ায় চর কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝানঝাইড় কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম কালাসোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে জিগাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বন্যার পানি উঠেছে ৯২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তার মধ্যে ৮৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শহিদুজ্জামান বলেন, এ বছর বন্যায় এ পর্যন্ত উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ১ হাজার ১৬ টি পরিবার বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত এ উপজেলায় ১১০ মেট্টিকটন চাল, নগদ ৫ লক্ষ টাকা, ৯৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য বাবদ ৫০ হাজার টাকা এবং গো-খাদ্য বাবদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫০ মেট্টিকটন চাল, ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ও ১০৫ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
গত ৯ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৪ সেঃমিঃ বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল রোববার বিকেল ৩টায় ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com