বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন

গাইবান্ধায় রক্তের সংকটে ভুগছেন রোগীরা স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের এগিয়ে আসার আহবান

গাইবান্ধায় রক্তের সংকটে ভুগছেন রোগীরা স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের এগিয়ে আসার আহবান

স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনাভাইরাস ও রমজানের কারণে গাইবান্ধার সাত উপজেলা থেকে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি ও থ্যালাসেমিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা রক্তের সংকটে ভুগছেন। তিন থেকে চারদিন অপেক্ষা করেও মিলছে না প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমাসে ১২০ থেকে ১৫০ ব্যাগ রক্ত স্ক্রিনিং (রোগের পরীক্ষা) করা হলেও গত এক মাসে স্ক্রিনিং করা হয়েছে প্রায় ৫০ জনের। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবা চালু না থাকায় রক্তের প্রয়োজন হলেই রোগীদের রেফার্ড করা হয় এই হাসপাতালে। ফলে অচেনা-অজানা শহরে গিয়ে রক্ত না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকছে প্যাথলজি বিভাগ।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর জেলা শহরের মেসগুলো থেকে রক্তদাতা ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়ীতে চলে গেছেন। এছাড়া গত ১০ এপ্রিল গাইবান্ধা লকডাউন ঘোষণার পর একেবারেই কমে গেছে যারা চার মাস পরপর স্বেচ্ছায় রক্ত দিতেন তাদের সংখ্যাও। এ পরিস্থিতিতে তারা আর যাচ্ছেন না রক্ত দিতে। ফলে রক্ত সংকটের এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়ে পড়েছেন দালালরা। তারা নিয়মিত রোগীর স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে ক্লিনিকের অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় পেশাদার রক্তদাতার রক্ত কিনে রোগীকে দেন। আর ক্লিনিকে এসব রক্তের চারটি (সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করা হয়- হেপাটাইটিস-বি ও সি, সিফিলিস এবং এইচআইভি) পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করেই রোগীর শরীরে দেয়া হয় সেই রক্ত। এতে করে রোগীদের মারাত্মক এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
পলাশবাড়ী উপজেলার পারআমলাগাছী গ্রামের রমিছা বেগম বলেন, ৩১ বছর বয়সী থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলেকে ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। রক্তের অভাবে সে অসুস্থ্য হয়ে এখন শয্যাশায়ী। এখন জরুরীভাবে আরও দুই ব্যাগ ‘ও পজেটিভ’ রক্তের দরকার। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন গাইবান্ধা সরকারি কলেজ ইউনিটের সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমাদের বেশিরভাগ রক্তদাতাই কলেজের শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাসের ছুটিতে তারা সবাই বাড়ী চলে যাওয়ায় চাহিদামতো রোগীদের রক্ত সরবরাহ করা যাচ্ছে না। যেখানে প্রতিমাসে আমরা ৭০ ব্যাগের বেশি রক্ত দিয়ে থাকি সেখানে গত এক মাসে দিতে পেরেছি মাত্র চারজনকে।
অপরদিকে সন্ধানী ডোনার ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কার্যকরী উপদেষ্টা নয়ন চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিমাসে ১২০ থেকে ১৩০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হলেও গত ১ মাসে মাত্র ২৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হয়েছে। তবুও সেটা গাইবান্ধা সদরসহ সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলা ঘুরে প্রত্যেক রক্তদাতার বাড়ী বাড়ী গিয়ে। এর মধ্যে থেকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে দেয়া হয়েছে ২৩ ব্যাগ ও ক্লিনিকে দেয়া হয়েছে ৪ ব্যাগ। তিন থেকে চারদিন অপেক্ষার পরও মিলছে না প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত। সন্ধানী ডোনার ক্লাবের আরেক কার্যকরী উপদেষ্টা নাহিদ হাসান চৌধুরী রিয়াদ জানান, রমজান মাসে এমনিতেই রক্ত সংগ্রহ কমে যায়, তার উপর করোনাভাইরাসের কারণে এক মাস আগে মেস ছেড়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ীতে চলে যাওয়ায় এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
এ বিষয়ে সন্ধানীর সভাপতি ও গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডাঃ এবিএম আবু হানিফ বলেন, রক্ত সংগ্রহ ও সরবরাহ যাতে বিঘিœত না হয় সেজন্য সন্ধানীকে একটি মোটরসাইকেল চালানোর পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। এতে তারা খুব সহজেই কাজটি করতে পারছে। এ অবস্থায় নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের এগিয়ে আসা উচিত।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com